‘কোটা বাতিল হলেও সরকার প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাবে’
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৭তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২০তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বাতিল করে দিলেও সরকার প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধার সুরক্ষার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের শক্তি ও মেধাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের অবহেলা না করে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তুলতে আহ্বান জানান তিনি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে দৃষ্টি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীরা পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে প্রতিবন্ধী এবং অনগ্রসর মানুষের সুযোগের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তারই আলোকে আজ আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করছি। যাদেরকে এক সময় অবহেলা করা হতো, একজন মানুষ হিসেবে যার কোনো অধিকার ছিল না আমরা ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। প্রতিবন্ধীরা এখন লেখাপড়া করছে, খেলাধুলার মাধ্যমে স্বর্ণ জয় করে তারা দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে। সুতরাং এখন আর প্রতিবন্ধীরা অবহেলার পাত্র নয়।
তিনি বলেন, আমাদের একজন প্রতিবন্ধী বোন যার হাত নেই, তিনি পা দিয়ে চমৎকার একটি নৌকা বানিয়ে আমাকে উপহার দিয়েছেন। এটা তার প্রতিভার স্বাক্ষর। তাকে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দিলে সে সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই কাজ করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের প্রতিটি পরিকল্পনায় যাতে প্রতিবন্ধিরা থাকতে পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ১৬ লাখের বেশি প্রতিবন্ধীকে বর্তমানে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই মোবাইলফোনের মাধ্যমে তাদের এই ভাতা পৌঁছে দেওয়ার সহজ ব্যবস্থা করা হবে।’
মোবাইলভ্যানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রতিবন্ধী বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবন্ধীদের যারা দেখাশোনা করেন, প্রশিক্ষিত করেন-সেসব শিক্ষক, অভিভাবক যেন আরও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ পেয়ে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী করে তুলতে পারে, সেদিকেও সরকার বিশেষ কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। আমরা যেন তাদের অবহেলা না করি, মানুষ হিসেবে তাদের যে অধিকার তা যেন দিতে পারি।
সে লক্ষ্যে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী করে স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোনো শ্রেণির মানুষ অবহেলিত থাকবে না।
অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধীদের ভেতর যে শক্তি আছে, যে মেধা আছে-তা যেন ব্যবহার করতে পারি।
এ সময় উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণ অর্জনের কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল, কয়েক দিন পরপরই আন্দোলন হতো। তাই কোটা বাতিল করে দিলেও প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধার সুরক্ষার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।