দর্শকই তার কাছে পূজনীয়
বর্তমানের একজন ব্যস্ত ও মেধাবী অভিনেতা নিকুল কুমার মণ্ডল। টেলিভিশনের পর্দায় নানা ধরনের চরিত্রকে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেন নিকুল। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকের পরিচিত মুখ তিনি। শুধু ছোট পর্দাতেই নয় ‘দেবী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার’ ছবিতে অভিনয় করে বড় পর্দাতেও সাড়া ফেলেছেন এই অভিনয় শিল্পী।
বর্তমানে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন নিকুল। মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘প্রেম নগর’ নামে একটা সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। এ সিরিয়ালে গদা নামের একটা চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। এই নাটকে তিনি একজন ভালো মানুষ। এ ভালো মানুষটাকে তার মালিক অনেক বিশ্বাস করেন। এমনকি মালিক তার বউ-ছেলের চেয়েও এ গদাকেই বেশি বিশ্বাস করেন। নাটকটি নির্মাণ করেছেন সৈয়দ শাকিল। এটিএন বাংলায় ‘হাজার বত্রিশ’ নামের আরেকটি ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে। ওই নাটকেও অভিনয় করছেন তিনি। এটি শৌর্য দীপ্ত সূর্য ও মানসুর আলম নির্ঝরের পরিচালনার একটি নাটক। তাছাড়া বর্তমানে ‘নন্দিনী’ নামে সোয়াইবুর রহমান রাসেলের একটা ছবিতে কাজ করছেন। অন্য দিকে গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনার নতুন সিনেমা ‘সাপলুডু’তেও কাজ করছেন। মূলত এ দুটি ছবির কাজ নিয়ে সময় পার করছেন তিনি। আর বিভিন্ন নাটকের শুটিংতো থাকছেই।
এছাড়া নিকুল অভিনীত শেষ ছবি ছিল ‘দেবী’। অনম বিশ্বাসের নির্মিত ‘দেবী’ ছবিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে এই গুণী অভিনয় শিল্পীকে। এর আগে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে একজন ফটো সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। দীপংকর দীপনের এ ছবিতে অভিনয় করেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন। তারও আগে ‘নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার’ ছবিতে অভিনয় করে বেশ সুনাম পেয়েছেন নিকুল। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মিজানুর রহমান লাবু।
এক সময় মঞ্চে অভিনয় করতেন নিকুল। এমনকি এখনো থিয়েটার করেন তিনি। কিন্তু আগের মতো মঞ্চে সময় দিতে পারেন না বলে মন কাঁদে। যখন মঞ্চে পারফর্ম করেন তখন সবাই তার অভিনয় দেখে হাত তালি দেন, কেউ কেউ জড়িয়েও ধরেন। একদিনতো মঞ্চে অভিনয় করার পর অভিনেতা মামুনুর রশীদ তাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কে বাবা? কোথা থেকে এসেছো?’ যেসকল অভিনেতা/অভিনেত্রীদের সঙ্গে আগে অভিনয় করা হয়নি তাদের সঙ্গে আগামীতে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে এই গুণী অভিনেতার। এমন পছন্দের অভিনেত্রীদের মধ্যে আছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, মৌসুমী, বলিউডের ঐশ্বরিয়া রাই ও হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তাদের সবার সঙ্গে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে।
অভিনয় নিয়ে তার এতোটা পথ চলাতে অনেকের অবদানই আছে। এ শহরে তার রক্তের কেউ না থাকলেও ভালোবাসার কখনো কমতি হয়নি। প্রযোজক, নির্মাতা, অভিনেতা ও অভিনেত্রী থেকে শুরু করে সবাই তাকে ভালোবাসেন। তার ব্যক্তিজীবন ও অভিনয়জীবন, এ দুই জীবনেই তিনি অনেক মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। একবার জয়া আহসানের সঙ্গে এমন একটা ঘটনা ঘটছে। জয়াকে নিকুল ‘আপুনি’ বলে ডাকে। এটা প্রায় ৮/৯ বছর আগের কথা। একবার এক টেলিফিল্মের শুংটিয়ের সেটে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন জয়া আহসানের নাটকের নির্ধারিত হিরো অর্থাৎ যিনি কো-আর্টিস্ট ছিলেন তিনি কোনো কারণে শুটিং সেটে আসতে পারেননি। যেহেতু ওই কো-আর্টিস্টের অনুপস্থিত তাই শুংটিয়ের লোকজন তৎক্ষণাৎ একজন অভিনেতা খুঁজছিলেন। কিন্তু তখন ইনস্ট্যান্ট কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেদিন সকালে জয়া আহসান নিকুলকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘যেভাবে আছিস ঠিক সেভাবেই শুটিং স্পটে চলে আয়। সাথে কিছু জামা-কাপড় নিয়ে আসিস।’ নিকুলও ঠিক বাসার জামা পরে ওই অবস্থাতেই বাসা থেকে রওয়ানা দেন। ওই টেলিফিল্মে জয়ার হিরোর চরিত্রে অভিনয় করেন নিকুল।
আবার ঈদে ‘ঘাউরা মজিদ এখন ব্যবসায়ী’ নামের একটি নাটক প্রচার হয়। এটি পরিচালনা করেছেন শামীম জামান। এ নাটকে নিকুলকে ঘিরে সব ঘটানা ঘটতে দেখা গেলেও পর্দায় তার চরিত্রটা ছিল খুব ছোট্ট। মোশাররফ করিম ও শামীম জামান দুইজন বন্ধু। নাটকের শুটিং-এর আগে মোশাররফ শামীকে বলেন- ‘তুই এ নাটকে আমার চরিত্র নিয়ে না খেলে, নিকুলের চরিত্র নিয়ে খেল। ওকে আমরা অনেকদিন ধরে চিনি। আমার ধারণা ও এ চরিত্রে খুব ভালো করবে।’ তারপর ওই নাটকে নিকুল অভিনয় করেন। ছোট-বড় এতো ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার পর নিকুলের নিজের কাছে সবচেয়ে বেশি মনে রাখার মতো অভিনয় হচ্ছে নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের ‘ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে’ নাটকে। ওই নাটকে তার চরিত্রটা খুব ছোট হলেও খুব সাড়া ফেলেছিল। যা ছিল মনে রাখার মতো। এ নাটকে তার চরিত্রটা ছিল দারোয়ানের।
প্রায় সবার সঙ্গেই সব ধরণের চরিত্রে কাজ করেছেন নিকুল। তার কাছে মনে হয়, অভিনয় এমন একটা পেশা যেখানে একজন অভিনেতাকে সব কিছু জানতে হয় এবং সব চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরতে হয়। তার মতে যত জানা যাবে তত অভিনয় ভালো হবে। তার মতে শিক্ষা মনের ক্ষুধা মেটায়। শুধু তাই নয়। দর্শকই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন তার চাইতেও দর্শকের গুরুত্ব বেশি। দর্শকই তার কাছে পূজনীয়।