‘দিল্লির জামে মসজিদ ভাঙো, সিঁড়ির নীচে মূর্তি না পেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিও’

মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। অথচ মাত্র ১৭ মিনিটে বাবরী মসজিদ ভেঙেছে দিল্লির হিন্দুরা। একই ভাবে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদ ভাঙার দাবি তুলেছেন বিজেপি’র সচ্চিদানন্দ হরি সাক্ষী মহারাজ এমপি।

শুক্রবার এক সভায় ওই দাবি জানিয়ে বলেন, আমি প্রথম রাজনীতিতে আসার পর মথুরায় বলেছিলাম, অযোধ্যা, মথুরা, কাশীর দরকার নেই, দিল্লির জামে মসজিদ ভাঙো। সিঁড়ির নীচে যদি মূর্তি না পাওয়া যায় তাহলে আমাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিও। ওই বক্তব্যে আমি  অটল রয়েছি।’

তাঁর দাবি, মুঘল আমলে মন্দির ভেঙে তিন হাজারেরও বেশি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

শুক্রবার ভারতের মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমরা ১৭ মিনিটের মধ্যে বাবরী ভেঙেছি, (রাম মন্দির নির্মাণের জন্য) আইন তৈরি করতে কত সময় লাগে?’

এসব প্রসঙ্গে, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ-এর পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি মুহাম্মদ নুরুদ্দিন আজ (শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু রাজনৈতিক দল আবার মন্দির-মসজিদ ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করে রাজনীতির ময়দান গরম করতে চাচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা শুরু করা হয়েছে। এখন ভারতের চারটে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন। এই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষকরে ভারতীয় জনতা পার্টি যারা কেন্দ্রীয় সরকারে শাসন ক্ষমতায় আছে, তাঁরা কোনও উন্নয়নের ইস্যু খুঁজে না পেয়ে, জনগণের সমর্থন হারাবার ভয়ে,  মন্দির-মসজিদ ইস্যু, সাম্প্রদায়িক উসকানিকে সামনে আনতে চাচ্ছে। সাক্ষী মহারাজ দিল্লির জামে মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়াসহ তার ভিতরে দেবতার মূর্তি পাওয়া যাবে বলে যে দাবি করেছেন, তা আসলে রাজনৈতিক গিমিক এবং মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। সঞ্জয় রাউত যে মন্তব্য করেছেন তাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে এরমধ্যে না ধর্ম আছে, না কোনও সৎ উদ্দেশ্য আছে। সবসময়ই এরা নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্দির-মসজিদ ইস্যু তুলে ধরতে চায়। মন্দির-মসজিদের ভাবনায় জনগণকে ডুবিয়ে রেখে, জনগণকে সেই উত্তেজনার মধ্যে রেখে উত্তেজিত করে সেই আগুনে তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। আমার মনে হয় ভারতের জনগণ এধরণের সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’

মুহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেন, ‘ভারত চিরকাল সম্প্রীতির দেশ। এখানে মুসলিমরা প্রায় এক হাজার বছর শাসন করেছে। তাঁরা যদি মন্দির ভেঙে সব মসজিদ তৈরি করত, তাঁরা যদি হিন্দুদেরকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করত, তাহলে ভারতে মন্দিরের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। মাত্র চার বছর ক্ষমতায় এসে বিজেপি যেভাবে তাজমহল থেকে শুরু করে, জামে মসজিদ, লালকেল্লাসহ মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করতে চাচ্ছে, মুসলিম নামগুলো (শহর ও জেলা) পরিবর্তন করে দিয়ে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছে। মুসলিমরা যদি হাজার বছর ধরে এটা করত তাহলে ওঁদের অস্তিত্ব থাকত না। সুতরাং, এসব জিনিস বর্জন করা উচিত, ভারতের জনগণ তা বর্জন করবে। কখনোই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের কোনও উন্নতি হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি এধরণের ভুল প্রচারণায় আপনারা কর্ণপাত করবেন না। ভারতে যে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্য আছে তা রক্ষা করতে হবে।’

অন্যদিকে, গতকাল (শুক্রবার) শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’য় কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাসীন লোকেদের শিবসৈনিকদের নিয়ে গর্ব হওয়া উচিত যারা রাম জন্মভূমিতে বাবর রাজকে শেষ করে দিয়েছে।’

দলটি বলেছে, ‘অযোধ্যায় এখন রাম রাজত্ব নয়, সুপ্রিম কোর্টের রাজত্ব। ১৯৯২ সালে বালা সাহেবের (প্রয়াত শিবসেনা প্রধান) শিব সৈনিকরা রাম জন্মভূমিতে বাবরের  রাজত্বকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতায় বসে থাকা লোকেরা  (বিজেপি) ওই শিব সৈনিকদের বিষয়ে গর্ব করার পরিবর্তে তাদের থেকে ভয় অনুভব করছে। আপনারা মন্দির নির্মাণের তারিখ কেন ঘোষণা করছেন না? যদি রাম মন্দির ইস্যু আপনাদের হাত থেকে ফসকে যায় তাহলে ২০১৯ সালে আপনাদের রুটিরুজি ছাড়াও কিছু লোকের মুখও বন্ধ হয়ে যাবে।’