রাজধানীসহ সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি, দুপুর থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা

রাজধানীসহ সারা দেশে বহুল আলোচিত ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। আজ থেকে রাজধানীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে থাকছে বিশেষ কড়াকড়ি। রায়ের আগে ও পরে সারা দেশে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। মামলার অভিযোগ পত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম থাকায় এবং রায়ে তার সাজা হলে নাশকতার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝটিকা মিছিল এমনকি ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে পারেন— এমন খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। একাধিক সূত্র বলছে, রায় ঘিরে যে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৯ অক্টোবর দুপুর থেকেই রাজধানীতে থাকবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। পুলিশ সদর দফতর থেকে রাজধানীর সব থানায় মোতায়েন করা হবে বাড়তি পুলিশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবে জলকামান, এপিসিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাও। র‌্যাবের রিজার্ভ ফোর্সসহ রাজধানীর সব কটি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা থাকবেন রাজধানীর সড়কে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও ফায়ার সার্ভিসকে। ওই দিন সকাল থেকেই পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের বিশেষ আদালত ঘিরে নেওয়া হবে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। জাতীয় প্রেস ক্লাব, হাই কোর্ট, শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, মগবাজার, মালিবাগ, আজিমপুর মোড়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে। রাস্তায় সতর্ক পাহারায় থাকবে র‌্যাব। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোয় থাকছে র‌্যাব ও পুলিশের অন্তত ২০ নিরাপত্তা চৌকি। তবে এর বাইরেও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ ও র‌্যাব সদর দফতর থেকে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। রেলপথে দুর্বৃত্তদের যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। রেলওয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। এ ছাড়া রেলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলপথ সংলগ্ন পুলিশ ও র‌্যাবের কার্যালয়গুলোর সহায়তা চেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা থাকছে মহাসড়কগুলোতেও।

যদিও রায় ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল ঢাকা ক্লাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের জনগণ এ মামলার রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার মানুষ দেখতে চায়। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রায় ঘোষণা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কেউ যদি এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে তাকে কঠোর ভাবে দমন করা হবে। রেলওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবুল কাশেম বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে অন্য সময়ের চেয়ে রেলের নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি রেলগাড়ি ও রেললাইনে নির্দিষ্ট স্থান অন্তর পুলিশ পাহারা থাকবে যাতে কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা না ঘটে। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান বলেন, ১০ অক্টোবর বড় ধরনের একটা মামলা রায়ের দিন। এ দিনে যে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে এসব মোকাবিলায় পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি ছাড়াও বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা তল্লাশি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তির নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।