ঝিনাইদহ বেপরোয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্মান হচ্ছে না মানসম্মত রাস্তা

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন মানসম্মত রাস্তা নির্মান হচ্ছে না। রাস্তাগুলো নির্মানের অল্প দিনের মধ্যেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনও নজীর আছে কোটি টাকা ব্যায়ের রাস্তা ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তা নির্মানের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হলেও ঠিকাদার বা সওজ কর্মকর্তাদের কোন শাস্তিই হচ্ছে না। ফলে দিনকে দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সওজে কেও ঠিকাদারী করে আবার কেও চাকরী করে ফুলে ফেপে উঠছে। হঠাৎ তাদের সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে অল্প দিনের মধ্যে রাস্তা ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ায় পথচারী ও ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভ দানা বেধে উঠছে। সরেজমিন দেখা গেছে ঝিনাইদহ থেকে মুজিবনগর সড়ক প্রকল্পের রাস্তায় এখন খানা খোন্দকে ভরা। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা করতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যায় করা হলেও দুইটি বর্ষা পার হয়নি। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড থেকে পল্লী বিদ্যুত অফিস পর্যন্ত রাস্তায় অসংখ্য খানা খোন্দক।

সদরের ডাকবাংলা নারায়নপুর ত্রীমোহনী থেকে আব্দর রউফ ডিগ্রী কলেজ পর্যন্ত রাস্তায় চলা যায় না। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া থেকে হরিণাকুন্ডু হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি কাজ শেষ না করেই গত ৩০ জুন ৪৭ কোটি টাকার বিল তুলে নেয় ঠিকাদার। এখন ওই রাস্তার বিভিন্ন অংশে সাইট ভেঙ্গে যাচ্ছে। হরণিাকুন্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইনশৃংখলা কমিটির মিটিংয়ে নিম্নমানের রাস্তা করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পত্র পত্রিকায় রাস্তা নির্মানে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ঝিনাইদহ সওজের এসও জাহাঙ্গীর হোসেন তড়িঘড়ি করে অনত্র বদলী হয়ে যান।

ঝিনাইদহ থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে যশোর সড়কের অবস্থাও শোচনীয়। রাস্তা নির্মানে খন্ড খন্ড প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করা হলেও বছর না ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে রাস্তার চেহারা। কোটি টাকার রাস্তা এক মাসের মধ্যে নষ্ট হওয়ায় শহরের পাগলাকানাই এলাকাবাসি হাসান ক্লিনিকের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচিও পালন করেছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই।

সওজ সুত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে ঝিনাইদহ শহরের হামদহ থেকে ডাইভারশন সড়ক হয়ে আরাপপুর রাস্তাটি সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকা বারাদ্দ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার যেনতেন ভাবে কাজ করে বিল উঠিয়ে নেয়। এক মাসের মধ্যে রাস্তা আগের চেহারায় ফিরে আসে। এলাকাবাসি অবরুদ্ধ করেন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসও নাজমুস সাকিবকে। কিছুদিন পর তিনি চাকরী ছেড়ে চলে যান। অভিযোগ উঠেছে, গত ৩০ জুনের আগে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসডি তানভির হোসেন নিয়ম বহির্ভুত ভাবে অসংখ্য ডিপিএম, এলটিএম ও আরএফকিউ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

এসডি তানভির ঝিনাইদহ থেকে হাটগোপালপুর সড়কে ৫০ লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজে নিজেই ইট, পাথর, বালি, খোয়া ও খড়ি সরবরাহ করেন। তিনি বাগেরহাটের মোজাহার লিমিটেডের লাইসেন্সটি ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তাছাড়া ঠিকাদারের তত্বাবধানে থাকা রাস্তা এক বছরের মধ্যে নষ্ট হলে ঠিকাদারকেই মেরামত করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সওজ বিভাগের মামলামাল দিয়ে রক্ষনাবক্ষেনের কাজ করছেন এসডি তানভির। অভিযোগ উঠেছে এসডি তানভির আসার পর থেকেই ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে এসডি তানভির তার বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাই অনেক কিছুই আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, অল্পদিনে রাস্তা নষ্ট হওয়ার মুলে রয়েছে ওভার লোডিং ও নিম্নমানের বিটুমিন। বাজারে প্রচলিত ভেজাল বিটুমিন ব্যবহারের কারণে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন মুজিবনগর প্রকল্পে আরো ১৭ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। এই টাকা দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করা হবে।

মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি