ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৬ ব্যাংক কর্মকর্তাকে দুদকের চিঠি

আজ মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীমসহ ৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তাঁদের আগামীকাল বুধবার দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

আগামীকাল বুধবার দুদকে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীমসহ ৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ফারমার্স ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে চার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামে হস্তান্তর দেখিয়ে আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে তাঁদের তলব করা হয়েছে বলে জানা যায়। রাষ্ট্রের ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম দুদক প্রকাশ না করলেও তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যাঁদের তলব করা হয়েছে তাঁরা হলেন: ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি কে এম শামীম, ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার উম্মে সালমা সুলতানা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, সাবেক অপারেশন ম্যানেজার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুতফুল হক, সাবেক হেড অব বিজনেস ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন ও ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়। এর আগে এ বছরের ৬ মে একই অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে নিরঞ্জন ও শাহজাহান নামের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আইনজীবীরা দাবি করেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়ির দাম। ফারমার্স ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা দেওয়া হয়। আফাজ মাহমুদ রুবেল ও নামজুল আলম নামের আইনজীবীরা বলেন, দুদকের তলবে হাজির হয়ে তাঁরা ১৭১ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের দুই মক্কেল কোনো অন্যায় করেননি দাবি করে আইনজীবীরা বলেন, সরল বিশ্বাসে তাঁরা শান্তি রায় ও রঞ্জিত রায়কে সহায়তা করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, এস কে সিনহার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্তি রায় ৬ কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। শান্তি রায় সাবেক প্রধান বিচারপতির ‘কথিত পিএস’ রঞ্জিতের স্ত্রী। বাড়িটি বায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরও ১ কোটি ৪০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ফারমার্স ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জন্য শান্তি রায় ব্যবহার করেন নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্তি রায়ের স্বামী রঞ্জিতের ভাতিজা। আর শাহজাহান রঞ্জিতের বন্ধু। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বন্ধক রাখা হয় শান্তি রায়ের মালিকানায় থাকা সাভারের ৩১ শতাংশ জমি। আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্তি রায় বুঝে নেন। নিরঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কৃষিকাজ করেন। চাচার কথামতো তাঁকে সহায়তার জন্য ঋণ নিয়েছেন। শাহজাহান জানান, রঞ্জিত তাঁর বন্ধু। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকায় তাঁর দোকান রয়েছে। রঞ্জিতের কথামতো ঋণ নিয়ে তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন। রঞ্জিত সে টাকা কাকে দিয়েছেন, সেটা তিনি জানেন না।

কিন্তু দুদক সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে দুদকের। সে কারণে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। এদিকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, দুজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটা অনুসন্ধান চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে ঋণ গ্রহণ এবং ঋণের সেই টাকা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। ওই অনুসন্ধান দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।