ইতিহাসে ১ম প্রধানমন্ত্রী যিনি শিশুসন্তান নিয়ে যোগ দিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনে

আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অধিবেশনে শিশুসন্তানকে নিয়ে যোগ দিলেন। আর তিনি হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, ইতিহাসের দ্বিতীয় সরকার প্রধান যিনি কিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মা হয়েছেন।

প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ অধিবেশনে কোন প্রধানমন্ত্রী তার তিন মাসের মেয়েকে নিয়ে এলেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন তার মেয়ে নেভ তে আরোহাকে নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করেন। শিশু নেভ এখন মায়ের দুধ খায়। এই কারণে আন্তর্জাতিক এই সফরে তাকে সঙ্গে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মায়ের বৈঠকের সময়ও বাবার যত্নে ছিল সে। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, জেসিন্ডা গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রথমবারের মতো ভাষণ দেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি শিশুসন্তান নিয়ে এই অধিবেশনে যোগ দিলেন। ভাষণের আগে তিন মাস বয়সী মেয়ে নেভ তে আরোহার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আদরে–দুষ্টুমিতে মেতে ছিলেন জেসিন্ডা। ভাষণ দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ড মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন।

ইতিহাসের ১ম প্রধানমন্ত্রী যিনি শিশুসন্তান নিয়ে যোগ দিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনে

নেভের বাবা গেফোর্ড মেয়ের ছবি লাগানো জাতিসংঘের সেই পরিচয়পত্রের ছবি এবং জাতিসংঘে মেয়েকে নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা টুইটারে দিয়ে লিখেছেন- ‘টুইটারে সবাই নেভের জাতিসংঘের পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছে। এটিই সেটি। আহা, গতকাল নেভের ন্যাপি পাল্টানোর মাঝামাঝি সময়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করা জাপানের প্রতিনিধিদলের অবাক হওয়া চাহনির ছবি যদি তুলতে পারতাম!’ এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেছেন- ‘নিউজিল্যান্ডে বেশির ভাগ সময় নেভ আমার সঙ্গে থাকে।’ ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে তিনি কাজে যোগ দিয়েছেন আগস্ট মাসে। সন্তানকে দেখভালের জন্য তাঁর সঙ্গী টেলিভিশন উপস্থাপক গেফোর্ড এখন বাড়িতেই থাকছেন। আর জাতিসংঘ অধিবেশনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গীর খরচ তিনি বহন করছেন। নেভের দেখভালের জন্যই নেভের বাবাকে সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।

ইতিহাসের ১ম প্রধানমন্ত্রী যিনি শিশুসন্তান নিয়ে যোগ দিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনে

কোলের শিশু হলেও জাতিসংঘে প্রবেশের জন্য নিয়মকানুন মেনে তাঁর জন্যও পরিচয়পত্র ইস্যু করতে হয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা দেখিয়েছেন, কর্মজীবী মায়ের চেয়ে আর কেউ নিজের দেশকে এত ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। বিশ্বনেতাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ নারী। তাই যতটা সম্ভব নারীদের নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো প্রয়োজন।’

ইতিহাসের ১ম প্রধানমন্ত্রী যিনি শিশুসন্তান নিয়ে যোগ দিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনে

তবে যিনি এর আগে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম মা হয়েছিলেন তিনি হলেন পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো। তবে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে এক প্রধানমন্ত্রী মা সানন্দে বিশ্ববাসীকে তাঁর মাতৃত্বের সুসংবাদ দিতে পারলেও অপরজনকে তা গোপন রাখতে হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মাতৃত্বের বিষয়টি নিজ দেশসহ বিশ্ববাসী স্বাগত জানালেও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম মা বেনজির ভুট্টো এমন অভ্যর্থনা পাননি। দেশটির সামরিক অর্থায়নে পরিচালিত কট্টর ডানপন্থী জোটের কারণে তাঁকে মাতৃত্বের বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছিল। ১৯৯০ সালে তিনি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। কখনো তিনি তাঁর এই মা হওয়ার বিষয় প্রকাশ করেননি এবং মাতৃত্বকালীন ছুটিও নেননি। ব্যক্তিগত গাইনি চিকিৎসকের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর তিনি দ্রুত কাজে যোগ দেন। এর কয়েক মাস পর তাঁর সরকারকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর অন্য দুই সন্তানকেও একই পরিস্থিতির মধ্যে জন্ম নিতে হয়েছিল।

ইতিহাসের ১ম প্রধানমন্ত্রী যিনি শিশুসন্তান নিয়ে যোগ দিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনে

তবে বেনজির ভুট্টো দেখিয়েছিলেন, মাতৃত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই একই সঙ্গে চালানো সম্ভব।