ফরিদপুরে মন্দিরের নামকরণ হলো ‘জয় বাংলা সার্বজনীন শিব মন্দির’

ভালবাসা জাতি ধর্ম কূল মানেনা। মানেনা ধর্মীয় আচার এবং রাজনৈতিক দর্শনের বেড়াজাল। ভালবাসার সামনে অর্থকড়ি, টাকাপয়সা, মানসম্মান সবই তুচ্ছ।

পৃিথবীর সকল ব্যবধান, পার্থক্য, বিভেদ যেখানে মিলে একাকার তার নাম ভালবাসা। সেই ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ফরিদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পরানপুরের শিব মন্দির কেন্দ্রিক প্রায় ১০ টি গ্রামের ৫ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

ছাত্রলীগের প্রতি তাদের ভালবাসার প্রতিদান স্বরুপ তারা তাদের প্রায় দুশো বছরের পুরনো শিব মন্দিরের নাম করণ করল “জয় বাংলা সার্বজনীন শিব মন্দির” নামে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এই সাংবাদিক জানতে পারেন, প্রায় দু’শো বছর আগে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন যতন প্রামাণিক। কালান্তরে এই মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন তারই বংশধরদের পরবর্তী চার পুরুষ যথা তার ছেলে নগর প্রামাণিক ; তার নাতী মকন্ত প্রামাণিক ;তার নাতীর ছেলে নীলকমল প্রামাণিক;এবং বর্তমানে তার নাতীর নাতী নিতাই প্রামাণিক। কালাদিক্রমে মন্দিরের দায়িত্ব পরিবর্তন হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।

বরং মুক্তিযুদ্ধ এবং বিএনপি আমলে মন্দির টি ব্যপক ক্ষতির শিকার হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে এসে কংকালসার ৪ টি খুঁটি এবং শতছিদ্রে ভরা দুইচাল টিন ছাড়া মন্দিরটি তার সব কিছুই হারায়। বন্ধ হয়ে যায় শতবর্ষ ব্যপি উদযাপিত চৈত্র মেলা। অনেকে অনেক আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কেউ করেনি।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মন্দিরের ধ্বংস প্রায় অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি শেখ স্বাধীন মোঃ শাহেদ। তিনি বিষয়টি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হল চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অবহিত করেন এবং ছাত্রলীগ ঘোষণা করে,আগামী দুই সপ্তাহের ভেতর এই মন্দির তারা উপাসনার উপযোগী করে গড়ে তুলবেন। তারা তাদের কথা রেখেছেন।

চলতি মাসের ৬ তারিখে কাজ শুরু করে ১৫ তারিখে ধ্বংস প্রায় মন্দির টিকে নতুন করে রুপ প্রদান করে। ইটের গাঁথুনির সাথে সিমেন্টের শক্ত খুঁটি;উপরে এবং চারপাঁশে ঝকঝকে নতুন রঙিন ঢেউহীন!!!পুরনো জায়গা থেকে নতুন জায়গায় আজীবনের স্থায়ী ভিত পেয়ে যেন অন্যন্য উন্মাদিনী উজ্জ্বলিত শত বছরের এই ধর্মীয় আবাস। সত্যিই মুগ্ধ করার মত।

মুগ্ধ হয়েছেন এ অঞ্চলের ৩ টি ইউনিয়নের ১০ টি গ্রামের হাজার হাজার হিন্দুরা। এক সময় ছাত্রলীগের নাম শুনে যারা ভীত হত,আজ তারা ছাত্রলীগের ভালবাসায় অভিভূত। তাই তারাও এই ভালবাসার প্রতিদান স্বরুপ নিজ খরচে গত সপ্তাহে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্মদিনে কেক কেটে মিষ্টান্ন বিতরণ করে। প্রার্থনার আয়োজন করে। আর কাজ শেষ করে যখন ছাত্রলীগ নেতারা স্ব স্ব স্থানে ফেরত গেছেন তখন এই অবহেলিত হিন্দুরাই ভালবাসার আরেক নিদর্শন রাখল মন্দিরের নাম পরিবর্তন করে। সবার সম্মতিক্রমে বর্তমানে মন্দিরটির নাম রাখা হয় “জয় বাংলা সার্বজনীন শিব মন্দির”।

এ প্রসঙ্গে মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী নীলকমল প্রামাণিক বলেন “এত বছর পর যারা আমাদের ভালবেসে এতবড় কাজ টা করেছে,সেই ছাত্রলীগের ভালবাসার প্রতিদান স্বরুপ আমরা জয় বাংলা নামকরণ করেছি”।

মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বাবু রঞ্জিত রায় জানান “আমরা কারো চাপে বা প্রভাবে এটা করিনি। সকলের সম্মতি নিয়ে এ কাজ টা করায় আমরা খুশি। আমরা অলরেডি ৫টি ব্যানার করেছি। আরো কিছু ব্যানার করে জয় বাংলা নামটা ছড়িয়ে দিতে চাই।”

৯০ঊর্ধ্ব বয়োজ্যেষ্ঠ বিমল বিশ্বাস বলেন “আমরাতো জয় বাংলারই লোক। মন্দিরের নাম জয় বাংলা করাতে পুরনো জিনিস আরো পোক্ত হল”।

তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি – সাধারণ সম্পাদকের অনুমিতক্রমে কাজটিতে ব্যক্তিগত তহবিলের পাশাপাশি কিছু অর্থসংস্থান করেছে জাপান ছাত্রলীগের নিবেদিত কর্মীরা। সার্বিক খরচ ৮৭৫৫০ টাকা। কাজটিতে ফরিদপুর জেলা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের নির্দেশের প্রায় মাচ্চর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মীরা নিয়মিত স্বেচ্ছাশ্রম দেন। কাজটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিল ভুইয়া তানভীর। ছাত্রলীগ জয় বাংলা স্লোগানে ব্যপক পরিক্রমায় সামাজিক এবং মানবিক কাজ হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিতায় রাজবাড়ীর সুলতানপুরে তারা একটি সরস্বতী মন্দির স্থাপন করছে বলে জানা যায়।

এ সম্পর্কে শেখ স্বাধীন মোঃ শাহেদ বলেন “আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে আমি খুবই আনন্দিত। ধন্যবাদ জানাচ্ছি মন্দির সংশ্লিষ্ট সকলকে। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলা গড়ার কাজে এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি