চামড়ার দাম কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো ভুল ছিল নাঃ বাণিজ্যমন্ত্রী

চামড়ার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সেই সঙ্গে তিনি জানান, তিন কারণে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

গত বুধবার দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়েছে। এবার কোরবানি করা পশুর কাঁচা চামড়ার ন্যায্যমূল্য পায়নি কোরবানিদাতারা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো ভুল ছিল না। চামড়া নিয়ে জটিলতা খুব শিগগিরই কেটে যাবে বলে ট্যানারি মালিকরা আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান তোফায়েল।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখলাম চামড়া নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমি যখন দামটা কমালাম তখন সাংবাদিকদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখেছি দাম কেন কমালাম।

তিন কারণে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না জানিয়ে তোফায়েল বলেন, ‘দাম কমানোর পরও কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে না এর কারণ হলো- এক নম্বর গতবারের চামড়া রয়ে গেছে, দুই যারা ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালিক তারা বলছে ব্যাংকের ঋণ সঠিক সময়ে পাইনি, তিন সাভার যে শিল্পগুলো হওয়ার কথা সে শিল্গগুলো গড়ে উঠেনি। এসব নানা কারণে চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তবে ব্যবসায়ীরা গতকাল আশ্বাস দিয়েছেন এটা থাকবে না ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যে দামটা কমিয়েছিলাম সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’

গত ৯ আগস্ট কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য গত বছরের চেয়ে কম দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম পাঁচ টাকা কমিয়ে ধরা হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা।

অপরদিকে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২০-২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩-১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ১৫-১৭ টাকা।

ব্যাংক ঋণের বিষয় ব্যবসায়ীদের কোন সহায়তা করা হবে কি না- জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ নেয়া-পাওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন হাত নেই, এটি গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যকার বিষয়। গতকাল ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন বলেছেন যে সংকট দেখা দিয়েছে তা থাকবে না, দুই একদিনের মধ্যে অবসান হবে। আজ থেকে অফিস খোলা ব্যাংক খোলা আমার মনে হয় সংকটের সমাধান হবে।’

তবে ঈদে চামড়া ব্যবসায়ীরা পাড়া মহল্লা থেকে নূনতম দামে চামড়া কিনে। গ্রামাঞ্চলে বড় গরুর চামড়াও বিক্রি হয় চারশ’-৫শ’ টাকায়। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে আড়তে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমতে থাকায় অনেক মৌসুমি বিক্রেতা হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন বলেও দাবি করেন।

আড়তদারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার দাম ঠিক করে দিয়েছে ট্যানারি মালিকদের জন্য। মৌসুমি বিক্রেতারা সেই দাম মাথায় রেখে বেশি দাম দিয়ে চামড়ায় কিনে লোকসানে পড়েছেন।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।