পদ্মায় নাব্যতা সংকটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি সার্ভিস বিঘ্নিত

দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারনে ফেরি চলাচল ব্যহত হচ্ছে। গত রবিবার এ নৌরুটে ৬টি কে-টাইপ ও ৩টি মিডিয়াম ফেরি দিয়ে হালকা, ছোট যাত্রীবাহি গাড়িগুলোকে পারাপার করা হলেও গতকাল সোমবার থেকে তাও কমিয়ে মাত্র ৪টি ছোট ফেরি দিয়ে হালকা যানবাহন পারপার করা হচ্ছে। ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই নৌরুটের যাত্রীরা।

ফেরি চলাচলের জন্য উপযোগী পানির গভীরতা না থাকায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ফেরি চালকরা। এর আগে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে লৌহজং চ্যানেলে নাব্যতা সংকটের কারনে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে ৪টি কে-টাইপ ফেরি চলাচল শুরু করে।

বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মোঃ খালেদ নেওয়াজ জানান, বিকল্প চ্যানেলে পানির গভীরতা আছে ৪-৫ ফুটের মতো কিন্তু ফেরি চালাতে প্রয়োজন সাড়ে ৭ফুটের মতো। ১২ জুন থেকে ব্যবহার করে আসা এই চ্যানেলটিতে বর্তমানে পলি জমে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এর কারনে পূর্বের সরাসরি মূল চ্যানেল দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

রবিবার কিছু সময় ঘাট থেকে হালকা, ছোট যাত্রীবাহি গাড়িগুলোকে পার করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহনগুলোকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরোও জানান, নাব্যতা সংকট নিরসনে ড্রেজিং চলছে চ্যানেলে। দুইদিন সময় নেওয়া হয়েছে ফেরি চলাচল উপযোগী করতে। কিন্তু ড্রেজিং করেও বিআইডব্লিউটিএ ঠিক রাখতে পারছেনা চ্যানেলটি। তাছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলদিয়া রুটে চাপ পরায় আমাদের ৩টি ফেরি শাহ মুঘদুম, এনায়েতপুরী ও ক্যামেলিয়া পাঠানো হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলদিয়ায় আরেকটি ফেরি শাহ পরান পাঠানো হচ্ছে। এছারা ফরিদপুরে ফেরি করবী পাঠানো হয়েছে। আমাদের চ্যানেল ঠিক হলে এগুলো আবার পেরত চলে আসবে।

নির্বাহী প্রকৌশোলী (ড্রেজিং) এ এসএম আরেফিন জানান, বিকল্প চ্যানেল ছাড়াও সরাসরি মূল চ্যানেলেও ৭টি ড্রেজার কাজ করছে। পলি অপসারণ করা হলেও চ্যানেলের মুখে কেটে সরানো যাচ্ছেনা। ড্রেজিং করে ১৩ ফুট করলেও আশেপাশে থেকে ভেঙ্গে পড়ছে। বেশ কিছু দিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ এই চ্যানেলে ড্রেজিং করছিল। তারপরও নাব্যতা সংকট থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রিয় কোষাগার থেকে ব্যায় হলেও এর সুফল এই ফেরি রুটে কেন নেই তা এখন অনেকেরই প্রশ্ন। দায়িত্বশীলরা এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। সবসময় এই ফেরি চ্যানেলে এই সময় নাব্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এ নৌরুটের যাত্রীরা মনে করছে ঈদ আসন্ন তাই এই চ্যানেল সচল রাখা জরুরী। ডেজিংয়ের নামে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ একাধিক সূত্র দাবী করেছে যথাযথ ড্রেজিং হলে এই ফেরি রুট বন্ধ হওয়ার কথা নয়।

তাছারা ড্রেজিং নামে তেল চুরিরও অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) এ এসএম আরফিন। কবে নাগাদ ড্রেজিং শেষ করে ফেরি সার্ভিস পুরোপুরি সচল হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা।

মাওয়া ফাঁড়ির টিআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, ফেরি সার্ভিসের অচলাবস্থায় শিমুলিয়া ঘাটে আটকা পড়েছে পন্যবাহী ট্রাক সহ প্রায় ৬ শতাধিক ট্রাক। কখনো কখনো সীমিত আকারে ফেরি চালু হলেও ট্রাক সহ ভারী যানবাহন নিয়ে ফেরি চলা চল একেবারেই বন্ধ। তাই নাইট কোচ সহ অনান্য বাসের যাত্রীরা ফেরীতে নদী পাড় হয়ে ওপারে গিয়ে ঐ বাস কোম্পানীর নিধার্রিত বাসে উঠছে। আবার অনেকে ঘাটে এ অবস্থা দেখে ফিরে যাচ্ছে।কিন্তু পন্যবাহী ট্রাকগুলো ঘাটে বসেই আছে।

ট্রাক চালক মো. রতন মিয়া, মো ইসমাইল, ইদ্রিস আলী, মো. হানিফ, মোসলেমসহ আরো অনেকে জানান, ৫/৭ দিন বসে থাকলেও এখানেই অপেক্ষা করবেন। এ চালকরা আরো জানান, বিকল্প পথে গেলে বিড়ম্বনা আরও বাড়বে। আসতে খরচ হয়েছে আবার ঢাকা হয়ে যেতে খরচ হবে অনেক। লৌহজং থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, ফেরি চালু থাকলেই প্রতিদিন সেখানে যানবাহন পার করে কুল পাওয়া যেত না। আর সেখানে পুরো সার্ভিসে এই অচলাবস্থার কারনে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ঈদের আগ মুহর্তে এই অবস্থা আরো বেশী সঙ্কটে ফেলেছে।

মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনর্চাজ আরমান হোসেন জানিয়েছেন, সব কিছু বিবেচনা করে ঘাট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২য় দফায় রোববার রাত ১২ টা থেকে পদ্মা নদীর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে দিকে কিছু ছোট ফেরি দিয়ে হালকা যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।ফেরি চলাচল এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই নৌরুটের যাত্রীরা। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ছয় শতাধিক ছোট বড় যানবাহন।

ফেরি চলাচলের জন্য উপযোগী পানির গভীরতা না থাকায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ফেরি চালকরা। এর আগে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে লৌহজং চ্যানেলে নাব্যতা সংকটের কারনে ফেরি বন্ধ রাখা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে ৪টি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি