খোলা চিঠিতে আলোকচিত্রী শহিদুলকে নিয়ে যা বললেন ভারতীয় ফটোসাংবাদিক

ভারতীয় প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক এবং ফটোসাংবাদিক রঘু রায় তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। আর সেই চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, দৃক এবং পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমের মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক এবং ফটোসাংবাদিক রঘু রায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সত্যিকার ভয়াবহতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে ছিলেন। আর তার সেই অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ তাকে “মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু” সম্মাননা দেয়া হয়। আর এই সম্মাননার সূত্র ধরেই অতি সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।

খোলা চিঠিতে আলোকচিত্রী শহিদুলকে নিয়ে যা বললেন ভারতীয় ফটোসাংবাদিক

চিঠিটি বঙ্গানুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়-

“শেখ হাসিনা,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর অফিস, পুরাতন সংসদ ভবন
তেজগাঁও, ঢাকা -১২১৫, বাংলাদেশ

আমার নাম রঘু রায়। মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে ২০১২ সালে আপনাদের দ্বারা সম্মানিত হয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও তাদের সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধে যেসকল প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামে স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলে। বাংলাদেশ কবি, লেখক, সঙ্গীতশিল্পীদের একটি দেশ এবং দেশ বিভাগের সময় তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতে চলে আসেন। শুধু সাংস্কৃতিক ভাবে নয়, বরং আত্মিক দিক থেকেও আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মহান বিপ্লবী শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, যিনি পাকিস্তানি জেনারেলদের দমন ও নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান- এবং এই কারণে পাকিস্তানি জেনারেলরা বাংলাদেশীদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ কারণেই শেখ সাহেবের নেতৃত্বে পুরো বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং এভাবেই বাংলাদেশ জন্ম নেয়। একই ভাবে আপনিও ছেলেগুলোকে উচিৎ শিক্ষা দিতে যাবেন না আশা করি।

মহামান্য প্রধানমন্ত্রী, দৃক এবং পাঠশালা’র প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম শেখ সাহেবের একজন বিশাল ভক্ত এবং গত তিন দশক ধরে তাকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে জানতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে শহীদুল সেই বিরল মানুষদের মধ্যে একজন যিনি সত্য এবং সততার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং নিজের দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করতেও তিনি প্রস্তুত। কিন্তু গত রাতে (৬ অগাস্ট ২০১৮) শহীদুলকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ২০-৩০ জন লোক তাকে ধরে নিয়ে যায়, এবং নির্যাতন করে। এই নির্যাতনের ফলে সে নিজ পায়ে হাঁটতে পর্যন্ত পারছিলো না। আমি তার এই খবর শুনে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি।
আমাদের বলা হয়েছে যে পরিবহন বিভাগের অসাধুতা ও পুলিশের অবহেলার ফলে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে ও বাংলাদেশের তরুণরা এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। দেশের বিবেকবান যেকোন নাগরিকই এরকম নিরাপত্তা দাবি করবেন এবং শহিদুল আল-জাজিরা চ্যানেলের কাছে এই কথাই ব্যক্ত করেছেন।

খোলা চিঠিতে আলোকচিত্রী শহিদুলকে নিয়ে যা বললেন ভারতীয় ফটোসাংবাদিক

 

আল্লাহ আমাদেরকে এই জগতের সকল খারাপ থেকে দূরে রাখুক। যদি কোনও বিরোধী ও রাজনৈতিক দল এই তরুণদের ব্যবহার করে বা ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাদের সাথে মোকাবিলা করুন। কিন্তু আমার প্রিয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহীদুলের মতো বিশ্বস্ত, সৎ দেশপ্রেমিক, যাকে আমি সাধারণ জনগণের চোখ ও কান হিসেবে গণ্য করি, যার কারণে আমরা আসল সত্যটা জানতে পারছি যে তরুণদের একটা বড় অংশ এই ব্যাপারে কি ভাবছে, কিভাবে এর জন্য শাস্তি পাচ্ছে। এটা আমাকে পাকিস্তানি জেনারেলদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। শুধু ভারতের আমি নই, বরং সারা বিশ্বের অনেক সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিক, শিল্পী, লেখক শহীদুলকে সমর্থন করছে ও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। শহীদুলকে আটক ও অত্যাচারে আমরা গভীরভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছি। তিনি শুধুমাত্র তার ফটোগ্রাফিক দক্ষতা ও নিজের কণ্ঠ দিয়ে চলমান বাস্তবতার সত্যকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সহানুভূতিশীল ভাবে তুলে ধরেছেন।

আমি বিনীতভাবে আপনাকে অনুরোধ করব সৎ ও সত্যের প্রতিনিধিত্বকারী এই তরুণ সম্প্রদায়কে কোন ধরনের শাস্তি প্রদান না করতে। গণতন্ত্রের অন্তরাত্মা হিসেবে সত্য নিজের জন্যই বেঁচে থাকবে এবং আপনার-আমার মত লক্ষ-লক্ষ মানুষের হৃদয়কে আলোকিত করবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আশা করি আপনি শহীদুল আলমের জন্য আমাদের আন্তরিক অনুরোধ রক্ষা করবেন।

নিবেদক,
রাঘব রায়,
বাংলাদেশের বন্ধু”

প্রসঙ্গত, তাঁর অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দীর্ঘ ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি অগণিত পুরষ্কার অর্জন করে নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক “পদ্মশ্রী” সম্মাননা।