সারাদেশে এবার কোরবানি যোগ্য গবাদিপশুর দাম থাকবে সহনীয়

সারাদেশে ঈদুল আযহায় এবার কোরবানি যোগ্য গবাদিপশুর দাম সহনীয় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার কোরবানি যোগ্য পশুর কোনো সংকট হবে না। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোরবানি উপযোগী পশু রয়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আগস্টের শেষ দিকে। তবে এবার পশুর দাম সহনীয় থাকবে বলে নিশিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে এবার কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। এরমধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গতবছর কোরবানি যোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার। এবছর দেশে পর্যাপ্ত পশু পালন করায় পশু সংকটের কোনো শঙ্কা নেই। বরং ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান থেকে পশু আসা অব্যাহত থাকায় দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। আর এ বছর কোরবানি যোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষ রয়েছে ২৯ লাখ ২০ হাজার, ছাগল-ভেড়া ১৮ লাখ ২৬ হাজার।

জানা যায়, ২০১৬ সালে দেশে সব ধরনের পশু মিলিয়ে কোরবানির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ। ২০১৭ সালে পশু কোরবানি হয় ১ কোটি ৫ লাখ। সে হিসাব অনুযায়ী এবার ৫ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও ১ কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন- ‘এবারের কোরবানিতে পশুর চাহিদা যতই হোক না কেন, তা পশু সংকট তৈরি করবে না। কেননা, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে প্রচুর গরু আসছে। মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসে। এ কারণে এবারের কোরবানিতে পশুর দামও সহনীয় থাকবে। বরং আমার কাছে মনে হচ্ছে, ভারত থেকে গরু আসার পরিমাণ এখনকার মতো থাকলে দেশের খামারিরা পশুর ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হবেন।’

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এবার ঈদুল আজহা হওয়াতে পশু কোরবানি কিছুটা বেশি হবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ধারণা, সেটা ৫ ভাগের বেশি হয় না। এবার যদি এর চেয়ে কিছুটা বেশিও হয়, তবু পশুর কোনো সংকট হবে না। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোরবানি উপযোগী পশু রয়েছে।’ পুরান ঢাকার হাজারীবাগের কোম্পানীঘাটের বাসিন্দা পশু ব্যবসায়ী মো. সাফায়েত হোসেন বলেন- ‘এবার পশু কোরবানির সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়বে। এক্ষেত্রে মজুদ ঠিক না থাকলে দাম বাড়ার কথা। কিন্তু বাজারের বর্তমান ধারাবাহিকতা থাকলে পশু সংকট তৈরি হবে না। আর ভারত, ভুটান বা আশপাশের দেশগুলো থেকে গরু আসা অব্যাহত থাকলে উল্টো দেশের খামারিরা ন্যায্য দাম পাবেন না।’

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ বা ২২ আগস্ট দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে। ঈদ উদযাপনে সরকারও বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। ১১ সিটি কর্পোরেশন, ৩২৭ পৌরসভা, ৬৪ জেলা পরিষদ ও ডিসি অফিসের মাধ্যমে অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গবাদিপশুর খামারগুলোতে স্বাস্থ্যহানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ল্যাবরেটরি-পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রাণি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধের বিক্রয় ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, সীমান্তবর্তী এলাকায় এ সব দ্রব্যের চোরাইপথে আসা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ভাবে মনিটরিং এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসন পল্লী­ চিকিৎসকগণ এ সবের ব্যবহার রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ ছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা সহ ময়লা বর্জ্য যেখানে-সেখানে না ফেলা এবং কোরবানির আগে-পরে ঢাকা সিটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনদ্বয়ের সহযোগিতায় মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সকল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হবে।