নড়বড়ে নিরাপত্তা চৌকিতে শঙ্কিত শিক্ষার্থী নিরাপত্তা!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্থানীয়দের অনুপ্রবেশ দিনদিন অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাস দাপিয়ে বহিরাগতদের মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া এখন শিক্ষার্থীদের কাছে রোজকার দৃশ্য, তাদের বিচরণ ভূমি থেকে বাদ যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠটিও।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। একাডেমিক ভবন থেকে ফ্যান চুরি, নির্মাণাধীন ভবনের রড চুরি, মধ্যরাতে ছাত্রহল থেকে টিভি চুরি সহ বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তাব্যবস্থার সক্ষমতা।

কার্যত অক্ষম নিরাপত্তারক্ষীদের লোকাল ফোবিয়া নিয়ে অবশ্য খুব সরল স্বীকারোক্তি, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের দুই জন নিরাপত্তারক্ষী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও স্থানীয়রা তার থোরাই তোয়াক্কা করেন।প্রধান ফটকে একজন মাত্র নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্বে থাকায় বহিরাগত যানবাহন প্রবেশে বাধা দিলেও প্রায় সময়ই তাদের(বহিরাগতদের) জোরজবরদস্তির সাথে পেরে উঠতে পারেন না তারা।নিজেদেরকে প্রভাবশালী স্থানীয় দাবি করা এসব বহিরাগতদের কাছ থেকে তাই প্রায় সময়ই তুই-তুকারি এমনকি হুমকি ধমকির সম্মুখীন হতে হয় নিরাপত্তা রক্ষীদের।

নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রশাসনের দৃশ্যত পদক্ষেপের অনীহায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলয় মাহমুদ রুবেল বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তুলনা করা হয় স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের সাথে।জ্ঞান অন্বেষণে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো শিক্ষার্থী এই বিদ্যাপীঠের শরণাপন্ন হয়।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরাই এখানে আমাদের অভিভাবক।কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যুতে বরাবরের মতোই উদাসীন তারা। কিছুদিন আগের ঘটনা, বহিরাগত দু-তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় শাসিয়ে  যেতে দেখলাম, তার (শিক্ষার্থীটির) অপরাধ সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কের মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল, ঘটনাটি দেখে মনে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা শিক্ষার্থীদের হাঁটার জন্য নয় বরং বহিরাগতদের ভ্রমনের জন্য। এখন প্রশ্ন জাগে বিশ্ববিদ্যালয়টি আসলে কাদের?

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বহিরাগতদের বিচরণ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা সুলতানা জান্নাত বলেন, স্থানীয়রা প্রায় সময়ই দলবেঁধে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মাঠে খেলতে আসে, আপাতঃ দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই সামান্য মনে হতে পারে কিন্তু সম্প্রীতি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি কোনভাবে অবহেলা করার মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ এক পর্যায়ে রুপ নেয় যুদ্ধের পরিস্থিতিতে যা পূর্ণতা পায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত,দোকানপাট ও যানবাহনে আগুন দেওয়া ও ১৬০০ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমার মধ্যে দিয়ে।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও এমন কিছু হবেনা তার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

তিনি আরো জানান, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামলেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ পরিণত হচ্ছে প্রেমিক যুগলের আড্ডা খানায়।সীমানা প্রাচীর  না থাকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মাঠটিকে অনেকটাই পার্কের মতো ব্যবহার করছে এ যুগের স্বঘোষিত কিছু লাইলি মজনুরা। বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ঠেকানো ও খেলার মাঠকে কেন্দ্র করে এসব অশ্লীলতা বন্ধে মাঠটির চর্তুদিকে লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন, নিরাপত্তা জোরদার ও সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আংশিক ত্রুটির কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর(ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, অপ্রতুল নিরাপত্তা রক্ষীর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা সভায় আলোচনা করেছি। উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে আশা করি এর একটি সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব হবে। এ সময় নিরাপত্তা জোরদারে কার্যকরী পদক্ষেপ ও খুব শীঘ্রই সীমানা প্রাচীর নির্মাণেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

 

নাইমূল হাসান রাহাত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি