‘আইসিসির আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-আইসিসি’র বিচারিক এখতিয়ার মানাতো দূরের কথা, তাদের চিঠি নিতেও অস্বীকৃতি মিয়ানমারের। আইসিসির সদস্য ভুক্ত নয় দেশটি তবুও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ ও গণবাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার-১ গত ২১ জুন মিয়ানমারের কাছে জাবাব দিহিতামূলক একটি চিঠি প্রেরণ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আইসিসির সেই আদেশ আজও আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ জন্য মিয়ানমারই দায়ী। মিয়ানমার আইসিসির সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের ব্যাপারেও অনীহা দেখিয়ে আসছে।

জানা গেছে, আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী এর রেজিস্ট্রারের দপ্তর গত ২২ জুন আদালতের সিদ্ধান্ত ‘নোট ভারবাল’ (কূটনৈতিক চিঠি) আকারে বেলজিয়ামে মিয়ানমার দূতাবাসে পাঠায়। কিন্তু, ওই দূতাবাস আইসিসির নোট ভারবাল গ্রহণ না করায় তা আবার হেগে আইসিসিতে ফিরে আসে।

এরপর ২৮ জুন আইসিসির রেজিস্ট্রারের দপ্তর জাতিসংঘে মিয়ানমার স্থায়ী মিশনে নোট ভারবাল পাঠায়। মিয়ানমার স্থায়ী মিশন সেটিও গ্রহণ করেনি।

আইসিসি গত ২১ জুন এক আদেশে কোন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার থেকে ছয় লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হলো তার ব্যাখ্যা এবং আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার প্রসঙ্গে অভিমত জানাতে নেপিডোকে আগামী ২৭ জুলাই বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। সেই সময়সীমা অনুযায়ী, মিয়ানমারের হাতে আর ১০ দিন সময় আছে।

তবে এখনো মিয়ানমার আইসিসির কূটনৈতিক চিঠি গ্রহণ না করায় দেশটি যে ওই আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া আদালতের ওই আদেশের দুই দিন পরই নেপিডোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরের মহাপরিচালক য তে বলে দিয়েছেন, তাঁরা আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার মেনে নেবেন না। য তের দাবি, মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়। তাই তাঁর কাছে কোনো অভিমত ও ব্যাখ্যা চাওয়ার অধিকার আইসিসির নেই। আইসিসি চাইলেও মিয়ানমার তা মেনে নেবে না।

বাংলাদেশি ও পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা ছাড়া ওই দেশটিকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে আইসিসিতে বিচার করা কঠিন হবে। পুরো উদ্যোগটিই শেষ পর্যন্ত ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে আইসিসির প্রসিকিউটর মিয়ানমারের ওপর আদালতের বিচারিক এখতিয়ার প্রশ্নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিসি রোম স্ট্যাটিউটের ২০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে আইসিসি প্রসিকিউটরের উদ্যোগে আমরা উৎসাহ বোধ করছি।’

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে আইসিসি বিচারিক এখতিয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে আইসিসির প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদা গত ৯ এপ্রিল আইসিসি স্ট্যাটিউটের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী আবেদন করেছিলেন। বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হওয়ায় দেশটির ওপর আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। তবে মিয়ানমারের কাছে আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের গণবাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটের ব্যাখ্যা চাওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।

আইসিসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গত মাসের প্রথমার্ধে প্রসিকিউটরের অনুরোধ বিষয়ে গোপনীয় অভিমত আদালতে উপস্থাপন করেছে। আইসিসি যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তার একজন সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সদস্য নয় এমন দেশের ওপরও তার বিচারিক এখতিয়ার আছে তবে তা বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি বড় মাইলফলক হিসেবে অভিহিত হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও আদালতের সদস্য না হওয়ায় বিচার এড়িয়ে যাওয়া দেশগুলোর ওপর আইসিসি বিচারিক এখতিয়ার পাবে।