শিবালয়ে ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় ৪ দিনের টানা বৃষ্টির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ১ জুলাই থেকে আজ বুধবার ৪ জুলাই পর্যন্ত অভিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে উপজেলার পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, কৃষক, দিনমুজর, পরিবহণ শ্রমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে চিন্তার ভাজ পড়ে গিয়েছে।

শিবালয়ে ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

পাটুরিয়া ঘাটে এক পরিবহন শ্রমিক জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে যাত্রী কমে গেছে অনেক যার ফলে গাড়ির ট্রিপ পাচ্ছিনা। ৫ জনের সংসারে একাই কামাইতে সব চলে। দিনে এনে দিনে খাই। কিন্তু গত চারদিন ট্রিপ তেমন না থাকাতে খুব কষ্ট করে চলছি আমরা।

দিনমজুর সোনামিয়া জানান, মাঠে  শ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করি তা দিয়ে সন্তান সন্তানাদি নিয়ে কোনমত খেয়ে পড়ে বেচে থাকি কিন্তু গত চার দিন ধরে বৃষ্টি  হওয়াতে কাজ নেই। এভাবে টানা বৃষ্টি থাকলে হয়তো সবাইকে উপোস থাকতে হবে।

ভ্যান চালক দবির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে  আজ চার দিন হলো কোন ক্ষ্যাপ নেই বললেই চলে। দিনে এনে দিনে খাই আমরা এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

বরংগাইল কাচামালের আড়ৎ ব্যবসায়ী  সুনিল সরকার জানান,  বৃষ্টিতে বেশীর মরিচের ক্ষেত ও সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আড়তে মরিচ ও সবজির আমদানি খুবই কম। যাও কিছু মরিচ আসছে দাম আকাশ চুম্বী। প্রতি কেজি মরিচ আমরা ক্রয় করছি ৯৫-১০০ টাকা কেজি দরে। সবজিও চড়া মুল্যে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে এসবের  সরবরাহ কম থাকাতে এক ট্রাক মাল ক্রয় করতে দুই দিন লেগে যাচ্ছে। ট্রাক হলে মাল হয়না। আবার এই অল্প মাল ট্রাকে করে ঢাকায় বা চট্টগ্রাম পাঠাতে গেলে ভাড়ায় পুষায়না। কাচামাল বেশীক্ষণ ঘরে রাখলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে ব্যবসায় আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এভাবে চলতে থাকলে মুলধন হারিয়ে পথে বসতে হবে আমাদের।

ব্র‍্যয়লার মুরগীর খামারী সাধন সরকার জানান, গত চারদিক ধরে বৃষ্টি থাকাতে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। ২ সেট ২ হাজার মুরগী আছে আমার। এক সেট বিক্রর যোগ্য হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে সম্পূর্ণ রাস্তাই কাচা আর নদীর পারে রাস্তা হওয়াতে স্বাধীনতার পরে কোন জনপ্রতিনিধিই আমাদের এই রাস্তার উন্নয়নে কোন ভুমিকা রাখেননি শুধু ভোটের সময়ে ওয়াদা দিয়েই গেছেন। কাচা রাস্তা হওয়াতে কোন মালবাহী ভ্যান এই কাদা পাণির রাস্তায়  প্রবেশ করতে পারছেনা। যার ফলে বিক্রির যোগ্য মুরগী গুলো বিক্রিও করতে পারছিনা আবার অন্য সেটের মুরগীর খাবার গুলোর ওষুধ পাণি খাবার আনতে পারছিনা। এভাবে চলতে থাকলে ৩/৪ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আমাকে। আর এই মুলধন হারালে পথে বসে যাবো আমি।

এছাড়া রিশাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুন্নি ও সোহাগ, ইছাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গিতা রানী ও অয়ন জানান, টানা চারদিন ধরে বৃষ্টিতে কাদা পাণি ডিঙ্গিয়ে স্কুলে খুব কষ্ট করে আসতে হয় আমাদের। অনেক সময় স্কুলে আসতে গিয়ে কাদায় পিছলে গিয়ে পড়ে গিয়ে বইখাতাসহ স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে যায় আমাদের। আবার বৃষ্টিতে ভিজে স্কুল করায় অনেক শিক্ষার্থী জ্বর ঠান্ডা জনিত অসুখে ভুগছে অনেকে। এখন বর্ষা মৌসুম চলছে পাণি বাড়ছে নদীতে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে রাস্তাঘাট তলিতে যাবে পাণিতে। একেতে রাস্তাঘাড় কাচা ও খানাখন্দে ভড়া। তার উপর টানা বৃষ্টি আর  মানুষ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট গুলো। এর ফলে আমাদের পড়াশুনা ব্যহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিনমাস ঠিকমতো স্কুল করতে পারলেও বাকি নয়মাস স্কুলে যেতে বৃষ্টি, কাদা, আর পাণিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের প্রতিনিয়ত। আশাকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্বের সহীত বিবেচনা করবেন। আর দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশেষ করে এই এলাকার কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। গেলো কয়েকমাস যাবত বৃষ্টির ফলে বেশীর ভাগ মরিচের ক্ষেতের মরিচ গাছ গুলো মরে গিয়েছে অনেক আগেই। এই মরিচের আবাদ করতে গিয়ে অনেক কৃষক ই নিঃস্ব প্রায় এখন।

ধান চাষ করেও সুবিধা পারেনি এই এলাকার কৃষকরা। শ্রমিকের মুজরী, সার-কীটনাশকের উর্দ্ধমুখী মুল্য আর ঝড় বৃষ্টিতে  ধানের জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়াতে। লোকসান গুনতে হয়েছে ধান চাষীদের।

এখন কুমড়ো, ঝিঙ্গা সহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করে লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ও। সে আশায় বাধ সেধেছে টানা বর্ষন। এই বর্ষনের ফলে বেশীর ভাগ শাক সবজির জমিগুলো তলিয়ে যাচ্ছে।এছাড়াও উপজেলার বেশীর ভাগ রাস্তাঘাট কাচা থাকাতে ও বহুবছর সংস্কার না করার ফলে মানুষ ও  যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

যার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য , উপজেলার শিবালয় মডেল ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের  আরপাড়া বাজার হইতে – পশ্চিম আরপাড়া পর্যন্ত চানমিয়ার বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিঃমিঃ,  পূর্ব আরপাড়া মসজিদ হইতে – পাইপাড়া মান্নানের বাড়ি পর্যন্ত ১ কি: মিঃ, পাইপাড়া মান্নানের বাড়ি হইতে পাইপাড়া গোরস্থান পর্যন্ত ১ কিঃমিঃ, পাইপাড়া মান্নানের বাড়ি হইতে –  উওর কাশাদহ ঢাকা- পাটুরিয়া রোডের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত প্রায় ২ কিঃমিঃ ও ঢাকা-  পাটুরিয়া মহাসড়কের সংযোগ রাস্তা থেকে পৃথিশ মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিঃমিঃ রাস্তা কাচা। সব মিলিয়ে এই ওয়ার্ডের প্রায় ৬ কিঃ মিঃ রাস্তা যা ওয়ার্ডের প্রায় ৮৫ শতাংশ রাস্তায় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। বছরের ১২ মাসের ডিসেম্বর – ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাস শীত মৌসুম থাকলেও বাকি ৮ মাস বৃষ্টি আর বন্যার পাণিতে রাস্তা ঘাট দখল থাকে, কাদা আর পাণির দখলে। যার ফলে এ সময়ে এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবন থমকে যায়।

মোঃ সোহেল রানা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি