ফরিদপুরে চাঞ্চল্যকর অন্তর হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে সন্দেহভাজন হত্যাকারী!

ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের অন্তর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এক সন্দেহভাজনকে নিয়ে প্রতিবাদে সমাবেশ করতে এসে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালিয়েছে সংসদ উপনেতার বহিস্কৃত সাবেক এপিএস ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী জামাল হোসেন মিয়ার গাড়ি চালক মিলন (৩২)। এসময় অভিযুক্ত মিলন নামের ওই সহযোগী ব্যক্তি কৌশলে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে। মিলনের ভূমিকা শুরু থেকেই সন্দেহজনক ছিলো।

ঘটনাটি ঘেটেছে শুক্রবার (২৯জুন) বেলা ১১টার দিকে অন্তরের নিজ গ্রাম পাগলপাড়া গ্রামে।

জানা গেছে, আজ সকালে নিহত অন্তরের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে পাগলপাড়া গ্রামে তাদের বাড়িতে যান সংসদ উপনেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে ও তার প্রতিনিধি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। এসময় তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদান জানান এবং দোষিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সবধরণের সহায়তারও আশ্বাস দেন।

এরপর পাগলপাড়া গ্রামে সমাবেশ করতে যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংসদ উপনেতার বহিস্কৃত এপিএস জামাল হোসেন মিয়া। প্রায় হাজার খানেক সমর্থক নিয়ে জামাল ও তার ভাই কামাল হোসেন মিয়া অন্তরদের বাড়ির পাশে তিন রাস্তার মোড়ে সমবেত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় অন্তরের বড় ফুফু অজিফা সেখানে উপস্থিত হয়ে কলার ধরে টেনে আনেন জামালের পেছনে অবস্থান করা মিলন নামে এক যুবককে। এসময় অজিফা বেগম মিলনের বিরুদ্ধে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের পক্ষে নানান তৎপরতা চালানোর অভিযোগ আনেন। তার সাথে পাগলপাড়া গ্রামের অন্যান্যরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। অন্তরের স্বজনেরা বলেন, এখনই সময় ওকে ধর। একথা শুনে কৌশলে মিলনকে ছাড়িয়ে নেন জামাল। এরপর বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে বিক্ষুব্ধদের আশ্বস্ত করেন। এরপর দ্রুতই সেখান থেকে সটকে পরে মিলন। একই ইউনিয়নের উত্তর শাকপালদিয়া গ্রামের মৃত মৃত মোনতা মোল্যার ছেলে এই মিলন মোল্যা (৩২)। সে জামাল হোসেনের প্রাইভেট কার চালক। ঘটনার পর থেকে এই মিলনই খুনিদের নানা তথ্য সরবরাহে লিপ্ত ছিলো।

এদিকে মিলনকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে দেয়ার পর জামাল একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও সমর্থকদের নিয়ে একটি মিছিলও করেন। বিপুলসংখ্যক বহিরাগত কর্মীসমর্থক নিয়ে জামাল ও তার ভাই কামাল পাগলপাড়া গ্রামে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করতে যান। ওই মিছিলের ব্যানারে অন্তর হত্যাকান্ডে জড়িত খুনি ও নেপথ্য মাদদদাতা সহ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি ছিলো। বিষয়টি ব্যাপক রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

নিহত অন্তরের পরিবারের সদস্যরা জানান, অন্তর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই মিলন তাদের বাড়িতে আসতো। অন্তরের নিখোঁজের ঘটনায় চাচী-ফুফুরা কাঁদলেও তার মা জান্নাতি বেগম কেনো কাঁদছে না? এমন প্রশ্ন করে পরিবারের মধ্যে বিভেদ লাগাতেও ব্যস্ত ছিলো। এছাড়া ঈদের আগে অন্তরের মা ঈদের কেনাকাটা করছে কেনো এমন সব কথাবার্তা বলেও সে কৌশলে নানা কুটকৌশল ছড়াচ্ছিলো। শেষ পর্যায়ে যে রাতে অন্তরের খুনিদের হাতে মুক্তিপণের টাকা তুলে দেয়া হয়, সেই রাতেও মিলন পুলিশের হাতে আটক জুবায়ের আলমের অ্যাপাচি মোটর সাইকেলে চড়ে সারারাত টহল দেয়। অন্তর হত্যাকান্ডের শুরু থেকে নানা অপতৎরতায় তার সম্পৃক্ততা ছিলো বলে তারা অভিযোগ করেন।

অন্তরের ফুফু অজিফা বেগম বলেন, মিলনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।

অন্তরের মা জান্নাতি বেগম বলেন, ছেলের লাশ পাওয়ার আগে আমাকে যে যেরকম বলেছে তাদের সেভাবেই টাকা দিতে রাজি ছিলাম। এখন আর ছেলে নেই। ছেলে হত্যার বিচার চাইতে যে যেখানে বলছে সেখানেই যাচ্ছি। তিনি অন্তর হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি জানান।

এদিকে, অন্তর হত্যা মামলায় প্রথম দফায় আটক খোকন, সুজন ও কামালের রিমান্ড মেয়াদ শেষে শুক্রবার তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে অন্তর হত্যা মামলার তদন্দকারী কর্মকর্তা এসআই কবির হোসেন জানান।

এদিকে, পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, অন্তর হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামীদের দেয়া তথ্য মতে আশরাফ নামে এক আসামী অন্তরকে হত্যার জন্য অপর আসামী জুবায়েরকে ৫০ হাজার টাকা দেয়। আর হত্যার আগে অন্তর খুনিদের কাছে তাকে (অন্তরকে) হত্যা না করার জন্য করুণ আর্তি জানায়। অন্তর তাকে হত্যা না করার জন্য খুনিদের ২০ লাখ টাকা দেয়ারও প্রস্তাব করে। অন্তর খুনিদের সকরুণ আর্তি জানিয়ে বলে, ভাই আপনারা আমাকে মাইরেন না। আমি দাদার কাছ থেকে বইল্যা আপনাদের ২০ লাখ টাকা এনে দিবো। অন্তরের এই করুণ আর্তি খুনিদের মন গলাতে পারেনি।

উল্লেখ, গত ৭ জুন রাতে নিখোঁজের পর হত্যা করা হয় অন্তরকে। এরপর অপহরণ নাটক মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় খুনিরা। এরপর গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে অন্তরের লাশ পাওয়া যায় চকের মধ্যে। অপহরণের মাত্র আধা ঘন্টা পরে গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় তাকে।

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি