দেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যালঘু না ভেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পরামর্শ

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে উত্তম বন্ধু কেউ নেই উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পাকিস্তানের দোসরদের (বিএনপি) আমাদের বিকল্প ভাবলে বড় ভুল করবেন। আমরা ভুল করলে সংশোধন করব। কিন্তু, তারা করবে না। কারণ, সংখ্যালঘু নির্যাতনই তাদের পলিসি। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (আইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির আমলে আপনাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেটা ওই সরকারের কেন্দ্রীয় পলিসির অংশ। আমাদের আমলে যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে, সেটা শেখ হাসিনা সরকারের পলিসির অংশ না। আওয়ামী লীগেও দুর্বৃত্ত আছে। কেউ কোনো অন্যায় করলে আমি তাদের দুর্বৃত্ত বলি। জমি, বাড়ি, সম্পত্তি দখল এ ব্যাপারে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স। আপনাদের জন্য বিকল্প আমরাই। আমাদের বিকল্প পাকিস্তানের দোসররা, ভুল করে পাকিস্তানের দোসরদের আমাদের বিকল্প ভাববেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ে আপনাদের কে মূল্যায়ন করেছে বেশি? আমাদের দলের দু’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য আপনাদের লোক। সম্পাদকের তো অভাব নাই। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দফতর, প্রচার। সারাদেশে এসব পদে ৮০ শতাংশ আপনাদের লোক। পুলিশ ও সচিবালয়ে আপনাদের অবস্থান দেখুন। এটা ‍হিন্দু বলে না, যোগ্যতার বলে। আওয়ামী লীগ আপনাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে। বিএনপি কি করে?’

দেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যালঘু না ভেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মাইনরিটি ভাবেন কেন? মাইনরিটি ভাবলে একটা দুর্বলতা চলে আসে। আপনাদের ভোটের মূল্য কম। আর মুসলমানদের ভোটের মূল্য বেশি এটা কি সংবিধানে আছে? ভোটের অধিকার সবার সমান। নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। মাথা উঁচু করে, শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান।’

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সফর নিয়ে বিএনপি অনেক কথা বলছে। কিন্তু, সেখানে আমরা নির্বাচন নিয়ে একটি কথাও বলিনি। আমরা মোদির সঙ্গে বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ক, পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক, পিপলস টু পিপলস সম্পর্ক, তিস্তা সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।’

খালেদা মুক্তির সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই
সুপরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে জামিনের পরও সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। মামলা কয়টা, জামিন কয়টার হবে? এটা আমাদের বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ তো মামলাও দেয়নি, জামিনও দিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আইনি লড়াইয়ে যান, আইনি লড়াইয়ে আপনারা একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন, আরও মামলা আছে। আরও লড়াই করুন, আদালতই জামিন দিতে পারেন।’

বিএনপির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ট্রেন শুরু হয়ে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপির হেরে যাওয়ার ট্রেন শুরু হয়ে গেছে। পর্যবেক্ষকরাও বলছে খুলনায় দু’তিনটা অনিয়ম ছাড়া নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি এই নির্বাচন মেনে নিতে পারেনি। ১ লাখ ১০ হাজার ভোট পেয়েছে। নির্বাচন ফেয়ার না হলে বিএনপি এত ভোট পেত? নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের ভোট কমে যাচ্ছে। এখন তিন দিন পরে এ কি শুনি মন্থরার মুখে। এখন বার কাউন্সিল নির্বাচন খুলনার সঙ্গে মিলিয়ে বলছে, গেল রে গেল, বার কাউন্সিলও গেল।’

তিনি দাবি করেন, ‘হেরে যাওয়ার ভয়ে নানান ছল-ছুঁতোয় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে বিএনপি। আমরা নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী চাই। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে আসবে কিনা। এজন্য আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। ভোট দিবে জনগণ, জনগণের ওপর তাদের বিশ্বাস কম। সেজন্যই তারা বারে বারে ঘরে বসে ইয়ার কন্ডিশন রুমে বসে প্রেস ব্রিংফিং করে পুরনো ভাঙা রেকর্ড বাজায়। কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়।’

এ সময় মঞ্চে বসা ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাদের বলেন, ‘বিদেশিরা কি আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে? এই যে মি. হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, তার দেশ কি আমাদের ক্ষমতায় বসাবে? আমাদের ক্ষমতায় বসাবে বাংলাদেশের জনগণ। তারা (বিদেশি) আমাদের বন্ধু। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আমরা সুদৃঢ় করতে চাই। আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। এই বন্ধুত্ব বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে।’

পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দাস দিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার, হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রমুখ।