‘এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব’ 

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এই দাবি করেন তিনি। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত ‘নাগরিক সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

মওদুদ বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমরা যতই সাধারণ নির্বাচনের কাছাকাছি যাচ্ছি এই সরকার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যত রকমের কৌশল করা যায়, সেগুলো তারা করছে। যাতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়। অর্থাৎ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যাতে বাংলাদেশের মানুষ না পায়। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যাতে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার সমস্ত আয়োজন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বার বলেছি এবং আবারও বলছি, নির্বাচন কমিশন যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে সবগুলো সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের জয়লাভ করানোর জন্য। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, আমাদের সমস্ত রকমের অসুবিধা সৃষ্টি করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। কিন্তু এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভবপর হবে না। সেই জন্য এ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন আনতে হবে। যারা দলীয় কোনো পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।’

গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন যেসব সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে তা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ক্ষমতা অপপ্রয়োগ করে সীমা নির্ধারণের চূড়ান্ত যে সংশোধনী তারা (নির্বাচন কমিশন) ছাপিয়েছেন তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং এ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এই জন্য যে, তাদের পক্ষে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

‘গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সরকারসমর্থিত প্রার্থীরা এবং তাদের সমর্থকরা অব্যাহতভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলেছে। নির্বাচন কমিশন একটি দৃষ্টান্তও স্থাপন করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের’- অভিযোগ করেন মওদুদ।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে চাইলেও না যেতে পারি। সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের সুবিধার জন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণে ব্যবস্থা তারা (নির্বাচন কমিশন) করেছে, এটা তারই প্রমাণ। সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বারবার প্রমাণ করে চলেছে যে, এ কমিশন সরকারেরই একটি আজ্ঞাবাহক প্রতিষ্ঠান। এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে কোনো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভবপর নয়।’

নিজের নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ টেনে মওদুদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ‘২৭২ নোয়াখালী- ৫’ আসন থেকে আমি পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। এ নির্বাচনী এলাকাটি ১৯৭৯ সাল থেকে প্রায় ৩৯ বছর ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, বসুরহাট পৌরসভা, কবিরহাট উপজেলা, কবিরহাট পৌরসভা এবং সদর পূর্বাঞ্চলের দুটি ইউনিয়ন অশ্বদিয়া ও নেয়াজপুরসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত। সদর পূর্বাঞ্চলের দুটি ইউনিয়ন অশ্বদিয়া ও নেয়াজপুর সরকার দলের প্রার্থীদের সুবিধার্থে নোয়াখালী- ৫ থেকে কেটে নোয়াখালী- ৪ এর অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন দুটির হাজার হাজার মানুষ গণস্বাক্ষর নিয়ে লিখিতভাবে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণের তালিকা চূড়ান্ত করে গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করেছে। এর ফলে সংযুক্ত দুটি আসনের মধ্যে জনসংখ্যা, ভোটার, আয়তন, ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যার দিক থেকে ব্যাপক বৈষম্য ও ব্যবধান তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রশাসনিক ইউনিট বা উপজেলার অখণ্ডতা বজায় রাখার শর্তে নোয়াখালী- ৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে অশ্বদিয়া ও নেয়াজপুর ইউনিয়ন দুটি বাদ দেয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সোনাইমুড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বরনগর কীভাবে নোয়াখালী- ২ আসনের অধীনে রাখা হয়েছে। সেখানে সোনাইমুড়ী উপজেলার বাকি সাতটি ইউনিয়ন নোয়াখালী- ১ আসনের অধীনে।

নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাসুক মিয়ার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপিপন্থী সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, বিএনপি নেতা আবু নাসের রহতম উল্লাহ প্রমুখ।