মানিকগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মাসের বেশির ভাগ সময়ই অফিসে অনুপস্থিত থাকার ও সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে। যার ফলে উপজেলার উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা ও দাপ্তরিক কাজ ব্যহৃত হচ্ছে।
চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবরের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে।মন্ত্রনালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকার উত্তরার ফ্লাট বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ।তার ব্যবসায়ীক অফিস নিকুঞ্জে। একারনে মাসের বেশির ভাগ সময়ই পরিষদ অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে উপজেলার উন্নয়ন এবং দাপ্তরিক কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের জীপ গাড়িটি তার ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় নিয়ে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। নিকুঞ্জে তার অফিস গ্যারেজে গাড়ি রাখার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।
শিবালয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো:আলী আহসান মিঠু জানান, আলী আকবর চেয়ারম্যান হওয়ার পরদিন থেকেই পরিষদের গাড়ি ঢাকায় নিয়ে রাখেন। যেদিন তিনি অফিসে আসেন সেদিনই কেবল গাড়িটি দেখা যায়। জরুরী প্রয়োজনেও পরিষদের অন্য সদস্যরা গাড়িটি ব্যবহার করতে পারেন না।বছর দুই আগে এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। বিষয়টি তদন্ত হলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, তিনি পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। আইন আছে উপজেলা চেয়ারম্যান বিদেশে যেতে চাইলে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের পুর্বানুমতি নিতে হবে। তার অবর্তমানে পরিষদের কাযক্রম সচল রাখতে দায়িত্বপালন করবেন প্যানেল চেয়ারম্যান। কিন্তু প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে হবে বলেই, তিনি সরকারী অনুমতি ছাড়াই বেশ কয়েকবার বিদেশ ভ্রমন করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সম্বনয়হীনতা। মহাদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিউক, আরুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মাসুম, তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, শিবালয় মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো:আলাল উদ্দিনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মাসে দুই দিনও তিনি অফিসে আসেন না। ব্যবসায়িক কারনে ঢাকায় থাকেন তিনি। পরিষদের অনেক সভাতেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন।এছাড়া এলাকার উন্নয়নে তাদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান কোন সম্বনয় করেন না। তাদের না জানিয়ে মেম্বারদের নিয়ে প্রকল্প গ্রহন করেন চেয়ারম্যান।মেম্বারদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাকি টাকা আত্বসাৎ করা হয়।
চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উপজেলা থেকে ১৯ টি উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহবান করা হলেও, চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে সেই প্রকল্প গুলো বাতিল করে দেন।এতে এলাকার উন্নয়নে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
অফিসে অনুপস্থিত থাকা, সরকারী গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার,অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমনসহ ৬ টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবরের বিরুদ্ধে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(সদ্য বিদায়ী)কামাল মোহাম্মদ রাশেদ।
এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মো:জহিরুল ইসলাম গত ১৫ এপ্রিল এক পত্রে ঢাকা বিভাগী কমিশনার কেএম আলী আজমকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।বিভাগীয় কমিশনার ১৫ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যানকে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত জবাব দিতে নোটিশ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবর জানান,তিনি নিয়মিত অফিস করেন।তার নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে।তাই পরিষদের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন না।যে কয়বার বিদেশ ভ্রমনে গেছেন সরকারী অনুমতি নিয়েই গেছেন।অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত বিষয়ে তিনি বলেন,নোটিশ পেয়েছি।সময় মতো জবাবও দিবো।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম জানান,উপজেলা চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়।বিভাগীয় কমিশনার উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে জবাব চেয়েছেন।লিখিত জবাব দেওয়ার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোঃ সোহেল রানা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি