উগ্র মতাদর্শের প্রচার মোকাবেলায় ইরানের আহ্বান

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম হোসেইন দেহকানি সারা বিশ্বে অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিতে উগ্র গোষ্ঠীগুলোর ভ্রান্ত আদর্শিক চিন্তাভাবনাকে দায়ী করেছেন। তিনি যুবকদের উগ্রপন্থার দিকে ধাবিত করতে উগ্র মতাদর্শের প্রচার মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বের সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেহকানি উগ্র মতাদর্শের হুমকি থেকে যুবকদের রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, উগ্রপন্থা মোকাবেলা করা এবং এর অশুভ প্রভাব থেকে যুবকদেরকে রক্ষার জন্য তাদের সঙ্গে সদাচরণ, সচেতনমূলক শিক্ষা প্রসারে পুঁজি বিনিয়োগ, দারিদ্রতা দূর করা, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন, আগ্রাসন বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো এবং চলমান বিভিন্ন সংকট ও বিরোধ নিরসনে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এবং এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপ ও আমেরিকার যুবকদের উদ্দেশ্যে দু’টি খোলা চিঠি লেখেন। ওই দুই চিঠিতে তিনি পাশ্চাত্যসহ অন্যান্য অঞ্চলে উগ্রপন্থা বিস্তারের কারণ ও এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনমূলক বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি এ পত্রের মাধ্যমে উগ্রপন্থা ও সহিংসতা বিস্তারের কারণ অনুসন্ধানের জন্য পাশ্চাত্যের যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলা হয়েছে থাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওই চিঠি মানুষের চিন্তার জগতে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।

মার্কিন চিন্তাবিদ ও অধ্যাপক রিচার্ড ফ্যাল্ক বলেছেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যদিও পাশ্চাত্যের যুবকদের উদ্দেশ্যে ওই খোলা চিঠি লিখেছেন কিন্তু এটি আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি বলেন, “ওই চিঠিতে সবার জন্য আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার দিকনির্দেশনা রয়েছে  এবং এটা গোটা মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর।”

বর্তমানে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বছরের পর বছর ধরে উগ্রবাদ ও সহিংসতা লক্ষ্য করছি যার পেছনে সৌদি আরবসহ এ অঞ্চলের আরো কয়েকটি দেশ এবং পাশ্চাত্যের সমর্থন রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের দুর্বল অবস্থান ও নিষ্ক্রিয়তা সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের বেপরোয়া করে তুলেছে। একদিকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জাতির ভবিষ্যতের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতা অন্যদিকে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অধিকাংশ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সোচ্চার না হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। এ ছাড়া, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমের প্রচার ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে “সহিংসতা ও উগ্রবাদকে না বলা এবং যুদ্ধ ও সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ব গড়া”র প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হয়েছিল। বর্তমানেও ইরানের বক্তব্য হচ্ছে, শান্তিকামী সব দেশের উচিত উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় একে অপরকে সহযোগিতা করা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘টেকসই শান্তি’ শীর্ষক বৈঠকে তেহরানের পক্ষ বিশ্ববাসীর কাছে এ বার্তাই তুলে ধরেছেন।