দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন আবদুল হামিদ

দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য আজ শপথ নিয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।

শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিক, কূটনীতিক ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শপথের আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ২০১৩ সলের ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। আবদুল হামিদ আজ ২১তম এবং নিজে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

আবদুল হামিদ আ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।

আবদুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন ভৈরব কেবি স্কুল এবং নিকলী জেসি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রি এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। ১৯৯০-১৯৯৬ সময় পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে একই কলেজের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাব-ডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের জেলা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদীয় আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ -৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।

১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবদুল হামিদ ৭ম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন।

একজন সমাজসেবক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বনামখ্যাত আবদুল হামিদ তার নির্বাচনী এলাকায় একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলার সর্বত্র রয়েছে তার উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সম্মানিত সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখায় সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতা পদক।