শিক্ষিত বনাম শিক্ষা, ফলাফল?

দূর্ভাগ্য বশতঃঢাকা ‘ভার্সিটির তথাকথিত ছাত্র কর্তৃক রাস্তায় লেখা “টিয়ারশেল…. না” শিরোনামটি আমার লেখার উপজীব্য। অবাক হলেন নাকি!! আপনাদের মতো অনেকে বিস্মিত হলেও এখানকার কতিপয় ছাত্র নামধারীদের কাজ কর্ম দেখতে দেখতে আমি অবাক হওয়া ভুলে গেছি। এদের অনেক কিছুতে বাড়াবাড়ি রীতিমত বেয়াদবির পর্যায়ে পড়লেও গায়ের জোরে বৈধতা পেতে চায়। তাদের বাস রাস্তায় নিয়ম মেনে না চললেও পুলিশের কিছু বলা যাবেনা। এখানকার ছাত্ররা বাইক চালাবে কিন্তু হেলমেট পড়বেনা, উল্টোপথে যাবে কিছু বলা যাবে না। সামান্য বিষয় নিয়ে হুট করে রেগে গিয়ে যার তার উপর চড়াও হবে, সাঙ্গ পাঙ্গদের ডেকে এনে তুলকালাম বাধাবে, ভাংচুর করবে এটা যেন তাদের ক্ষমতা জানান দেয়ার একটা ট্রেডিশন হয়ে গেছে। আজ শুধু রাজপথে বেফাঁস কথাটির সুরতহাল করা আমার উদ্দেশ্য। যেহেতু টিয়ারশেলটা আমারি সহকর্মী ছোঁড়ে। পুলিশ তো নিজ ইচ্ছেতে কোনো কিছু করতে পারেনা। সে বোধটুকু অন্ততঃ তোমাদের থাকা উচিত।

শিক্ষিত বনাম শিক্ষা, ফলাফল?

পুলিশের যে কোনো কাজ তা পক্ষান্তরে সরকারেরই ইচ্ছের ফসল। অত্যন্ত দুঃখবোধ নিয়ে বলছি, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি সন্তানদের উচ্চ মার্গীয় শিক্ষা প্রসূত উর্বর মগজের আবাদী ফসল এ লজ্জাকর লেখা। এটি তোমাদের বাবা,মা,ভাই,বোন,আত্মীয় স্বজনদের নজরে পড়লে তোমাদের কেমন লাগবে বা লাগছে জানিনা। তবে আমরা তোমাদের অভিভাবক হিসেবে যারপর নাই লজ্জিত। তোমরা হয়তো কোটার আন্দোলনে সফল হয়ে ঘরে ফিরতে পারবে কিন্তু রাজপথে যে কালিমা লেপন করে গেলে তা তো সবাই জানে,কোন মুখ নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াবে বাছাধনেরা!!!?? এ বিশ্ব বিদ্যালয়ের যে কৃতি সন্তানটি রাজপথে এ অশালীন লেখাটি লিখেছে, সে কেবল নিজের কলুষিত মানসিকতারই পরিচয় দেয়নি, সে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে বিবস্ত্র করে উলঙ্গ করে দিয়েছে।

শিক্ষিত বনাম শিক্ষা, ফলাফল? ২

পাশাপাশি এহেন অসংখ্য অপ্রকাশিত নিন্দিত কাজকর্ম পেশাগত কারণে সেখানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের করতে দেখতে পাওয়ায় নৈতিক স্খলনের বিষয়টি অনেকের চোখে পড়লেও অনেকেই এড়িয়ে যায়। তাদের রাজপথে লেখা আজকের এ লেখাটিও শালীনতার সীমা অতিক্রম করায় সেভাবে প্রকাশ পাবে না আমি জানি। কিন্তু কত লোকই তো জানে তবে বলবে না। কেন বলবেন না?? আপনার আমার সন্তান, ভাই-ভাতিজাকে যখন বড় আশা করে ঢাকা ভার্সিটি, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে উচ্চ শিক্ষা নিতে পাঠিয়েছি তার নিকট থেকে অনেক কিছুই তো আমরা সর্বোচ্চটা আশা করতেই পারি, নাকি?

শিক্ষিত বনাম শিক্ষা, ফলাফল? ১

তারা সব কিছুতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে সেটা আমাদের প্রাণের দাবি।তাদের কথা-বার্তা,আচার আচড়ন, বিনয়, শালীনতা,আদর্শ, নেতৃত্বগুণ,সহনশীলতা সর্বোপরি তাদের মূল্যবোধের মাত্রাটাও আমরা সেরা মানের প্রত্যাশা করতেই পারি। তোমাদেরকে এ জাতির শ্রেষ্ঠ জায়গা গুলোতে আশা করাটা মোটেও অমূলক নয়। এই যে সরকারী চাকুরিতে কোটা নিয়ে যৌক্তিক আন্দোলন দেশব্যাপী সমাদৃত তথা প্রশংসিত হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে ছাত্র সমাজ তোমাদের মাধ্যমে আশার আলো দেখছে। এ যুগপৎ আন্দোলন যেভাবে বেগবান হচ্ছে তাতে সরকার সাড়া না দিয়ে পারেনা। সরকারও নতি স্বীকারের ভাব ভঙ্গিমা প্রদর্শন করছে বলে অনুমিত হচ্ছে। অথচ তোমাদের কতিপয় তথাকথিত বেয়াদব ছাত্রের কর্মকান্ডে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে, ঘৃণার পাত্রে পরিণত করেছে মেধাবী ছাত্রদের এ সুতিকাগারকে।

মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে এখানকার নীতি-নৈতিকতা বর্জিত মূল্যবোধহীন শিক্ষা নিয়ে। কি হবে এতো দেশ বরেণ্য বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দিয়ে, যদি তোমাদের মধ্যে মূল্যবোধই না থাকে! নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষা সমাজকে তথা দেশকে কতটুকু কল্যাণ দিতে পারবে?? সে প্রশ্ন তোমাদের কাছেই। তোমরা নিজেদেরকে মহা শিক্ষিত মনে করলেও আসলে প্রকৃত অর্থে মানুষের কর্মেই তার শিক্ষার প্রতিফলন প্রকাশ পায়। এ দেশে অনেক মানুষকে দেখেছি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম বা অনেক ক্ষেত্রে কোন শিক্ষা না থাকলেও তাদের কাজ অনেক শিক্ষিত লোকের চেয়েও প্রশংসার দাবিদার।

আবার অনেক শিক্ষিত মানুষের কাজ দেখলে তাকে মূর্খের চেয়েও অধম মনে হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়ে মূল্যায়িত হয়। আসলে আমাদের সন্তানরা কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে??নাকি যান্ত্রিকতার ব্ল্যাকহোলে মূল্যবোধ আর আদর্শ বিসর্জন দিয়ে মেতে উঠেছে মৃত্যপুরীর অদূরে, কোনো নরক কুন্ডের সদর দরজার সন্নিকটে??