কুকুর বেড়ালের রবিনহুড আফজাল খান

ছোটবেলায় আমারা সবাই ‘রবিন হুড’ এর গল্প পড়েছি। এক চোর যে ছিল গরিবের বন্ধু। রাজাদের ধনসম্পত্তি চুরি করে সে বিলিয়ে দিতো গরিবের মাঝে। আমাদের সামাজেও এমন একজন মানুষ আছেন যিনি রবিন হুড নামে পরিচিত। তবে তিনি কোনও চোর নন। তিনি সাধারণ একজন মানুষ যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন জীবজন্তুদের রক্ষার্থে। অসহায় জীবজন্তুদের রবিন হুড তিনি। তাঁর নাম আফজাল খান।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার তিলপাড়ায় বসবাস আফজালের। বাবা পেশায় ব্যবসায়ী। ছোটবেলা বাড়িতে বানর পালতেন, বিড়াল পুষতেন। যদিও পরিবারের সবাই খুবই একটা ভালো চোখে দেখতো না তার পশুপ্রেমকে। অবশ্য বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন বলে পরিবারের লোকজন খুব একটা ঘাটাতো না তাকে। পেশা জগতে আফজাল খান একজন অভিনেতা। পাশাপাশি জীবজন্তুর প্রতি অসম্ভব ভালবাসার টানে তিনি কাজ করছেন অসহায় প্রাণীদের একটি আশ্রয়স্থল গড়ার জন্য।

তাঁর কলেজ জীবনে নিজের প্রিয় পোষা কুকুরকে দয়ামায়াহীন মানুষ নির্দয় ভাবে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলে। প্রিয় পোষা প্রাণীটিকে হারানোর ব্যথায় তিনি ঐ সমস্ত প্রাণীদের জন্য কাজ শুরু করেন, যেসব প্রাণী সমাজে অবহেলিত। আহত, অসুস্থ প্রাণীদের নিজ দায়িত্বে তিনি সেবা করে সুস্থ করে তুলছেন। তাদের আবাসস্থল দিচ্ছেন। তাদের ভরন পোষণের দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি। ২০১০ এ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় তিনি অনেক আহত প্রাণীদের নিজ খরচে চিকিৎসা করিয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই শুরু তাঁর।

নিজ জায়গায় ওই সমস্ত আহত প্রাণীদের উদ্ধার করে চিকিৎসা করেন তিনি। যেখানেই কোনও আহত প্রাণীর খবর পান, ছুটে জান তিনি সেই প্রাণীটিকে রক্ষা করতে। ২০১৫ সালে আফজাল বাড়িতে শুরু করেন রাস্তায় আহত পশু পাখিদের দেখভাল। গাড়িতে আহত অথবা মানুষের দ্বারা নির্যাতিত কুকুর বিড়াল তিনি নিজেই উদ্ধার করে বাড়ি আনেন। সেগুলোকে চিকিৎসা, সেবা-যত্ন করে লালন পালন করে নিজের ঘরেই রাখেন তিনি।

তাঁর এই কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমরা প্রাণীদের অনেক অবহেলার চোখে দেখি। আমরা মানুষ খাবার না পেলেও নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে কিছু একটা জোগাড় করে ফেলতে পারি। অসুস্থ হলে জানি আমাদের কি করতে হবে। কিন্তু এই বোবা প্রাণীগুলো তা জানে না। আর আমাদের সমাজে এমন মানুষ খুব কম যারা এদের কষ্ট উপলব্ধি করে এদের সহযোগিতা করবে। আমি এই বোবা প্রাণীগুলোর জন্য কিছু করতে চাই। তাদেরও ভালো ভাবে বাঁচার অধিকার আছে।

নিজের কাছের কিছু মানুষ নিয়ে আফজাল খান একটি দল গঠন করেন যারা তাঁর সাথে তাঁর মতো করেই নিঃস্বার্থ ভাবে অসহায় প্রাণীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আফজাল খানের অসামান্য অবদানের জন্য পশু-সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি ১০৮টা বাইক নিয়ে রোড মার্চ করেছিলেন শুধু মাত্র প্রাণী হত্যা বন্ধের লক্ষ্যে যা এখন পর্যন্তও কথাও হয়নি। রাস্তাঘাটের কুকুর বেড়ালের কষ্ট দেখলে তার মন পোড়ে। এদিক ওদিক থেকে কষ্টে থাকা কুকুর বিড়াল উদ্ধার করতে করতে তার ঘর এখন কুকুর বেড়ালের রাজত্ব।

তবে এদের খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে আফজাল বলেন, আমি টিভিতে অভিনয় করে যা পাই তার সবটাই ওদের পেছনে খরচ করি। তবে এখন খরচ আরো বেড়েছে। কারণ সরকারি পশু হাসপাতালগুলোতে গরু, ছাগল বা অন্যান্য গৃহপালিত প্রানীর চিকিৎসা বা ওষুধ পাওয়া যায় কিন্তু কুকুর বিড়ালের কোন ওষুধ পাওয়া যায় না। তাই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। আর তাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।’

তাঁর অসামান্য এই কাজের আরও সুদূর প্রসারী ভবিষ্যতের জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। কারণ নিজের একার পক্ষে এ সমস্ত প্রাণীদের রক্ষা করে ভরণ পোষণ করা তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটা গ্রুপ খুলেন যার নাম ‘রবিনহুড দা অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার’। তাঁর এই গ্রুপে সহযোগিতার জন্য যে কেউ যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়াও আর্থিক ভাবে এই অসহায় প্রাণীগুলোর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন যেন তারা বাঁচার মতো করে বাঁচতে পারে। আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিকাশ করতে পারেন উক্ত নম্বর গুলিতে, ০১৭৬৩৬৭২১৬৯, ০১৬২২৪৪৪০৬৯(পারসোনাল)।