সেনানিবাস নয়, ক্যান্টনমেন্টই রাখতে চায় সংসদীয় কমিটি

সংসদীয় কমিটি আগের মতো ‘ক্যান্টনমেন্ট বিল’ নামেই এটি রাখতে চায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ক্যান্টনমেন্ট শব্দটির বদলে সেনানিবাস শব্দ যোগ করে সংসদে নতুন আইন করার প্রস্তাব করলেও তা আর হচ্ছে না। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. মাহাবুবুর রহমান, ডা. দীপু মনি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এবং হোসনে আরা বেগম বৈঠকে অংশ নেন। ১৯২৪ সালের ‘ক্যান্টনমেন্টস অ্যাক্ট’ নতুন করে প্রণয়ন করতে গত বছরের নভেম্বর মাসে সংসদে সেনানিবাস বিল, ২০১৭ উত্থাপন করেন সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এজন্য একটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়। উপ-কমিটির দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইনে সেনানিবাস নয়, ক্যান্টনমেন্ট রাখা হবে। কারণ ক্যান্টনমেন্ট বললে তিন বাহিনীকেই বোঝায়। আর সেনানিবাস বললে মনে হয় শুধু আর্মিকে বোঝানো হচ্ছে। তাই আমরা ক্যান্টনমেন্ট শব্দটি রেখেই বিলটি চূড়ান্ত করেছি।

উত্থাপিত বিলটিতে আগের আইনের ২৯২টি ধারা থেকে কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু সংযোজন করে মোট ২১৮টি ধারা রাখা হয়। জনগণের দৃষ্টির সামনে খোলা অবস্থায় মাংস বহন, বিকলাঙ্গতা ও ব্যাধি অনাবৃত করে প্রদর্শন, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি, জুয়া খেললে, রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আগের আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ছিল এক টাকা।

প্রস্তাবিত বা খসড়া আইনে দেশের যে কোনো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি বা জুয়া খেলার শাস্তি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সেনানিবাস এলাকায় অবৈধ নির্মাণের জন্য আগে ৫০০ টাকা জরিমানা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা কমপক্ষে ২০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে।

সরকারি জমি খনন করলে জরিমানা ২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। খসড়া আইনে সেনানিবাস এলাকায় বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা স্থাপন করলে শাস্তি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর লাইসেন্স ছাড়া বাজার বা কসাইখানা খুললে জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়া আইনে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। আগে এই অপরাধের শাস্তি ছিল ২০০ টাকা। বসতবাড়ি জরাজীর্ণ থাকলে জারিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পশুকে আবর্জনা খাওয়ালে জরিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সরকারি কাজে বাধা দিলে জরিমানা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করলে আগে ৫০ টাকা জরিমানা হত, নতুন আইনে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভবনের কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে বিলম্বে আগে জরিমানার কোনো বিধান ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সময়সীমা বর্ধিতকরণের আবেদন তিনবারের বেশি হলে ২০ হাজার টাকা এবং পাঁচবারের বেশি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।