মুচলেকা দিয়ে আরো এক বছর সময় পেয়েছে বিজিএমইএ

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বহুতল ভবন ভাঙতে আরো এক বছর সময় পেয়েছে। আজ সোমবার বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন ভাঙতে আর সময় চাইবে না এই মর্মে মুচলেকা দেওয়ায় আদালত শেষবারের মতো এই সময় দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন। ওই তারিখে পর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন না ভাঙলে রাজউক ভাঙার ব্যবস্থা করবে।

গত ১২ এপ্রিল (২০১৮) পর্যন্ত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সময় ছিল। সেই হিসেবে আরও এক বছর সময় পেয়েছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত বুধবার বিজিএমইএ আর সময় চাইবে না মর্মে আদালতে মুচলেকা দেয়। আদালত ভবন ভাঙার সময়ের আবেদনের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। সেই সঙ্গে সময়ের আবেদন সংশোধন করে আনতে বলা হয়।

ওইদিন আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে শুনাতে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন। তখন আদালত বলেন, তাহলে বোর্ড অব ডিরেক্টররা আর সময় চাইবে না তো? জবাবে কামরুল হক বলেন, আর সময় চাইবো না। তখন আদালত বলেন, যখন ছয় মাস পরে ডিরেক্টর পরিবর্তন হবে তখন নতুন ডিরেক্টর এসে সময় চাইলে কী করবেন? এরপর আদালত বিজিএমইএর শেষ সময় চাওয়ার শর্ত সংক্রান্ত মুচলেকাটি পুনরায় সংশোধন করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আদালত বলেন, মুচলেকার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পর আদালতের আদেশ পালন না করা হলে এজন্য বোর্ড অব ডিরেক্টরদের সবাই জন্য দায়ী থাকবেন। একইসঙ্গে ভবন ভাঙতে রাজউককে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ী খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডিএইচ এম মনির উদ্দিন।

পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সুয়োমোটো রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।

পরে একই বছরের ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন করেন বিজিএমইএ। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে তা ৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ।

ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় রিভিউ আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল ও ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় দেন। পরবর্তীতে আরও এক দফা সাত মাস সময় দেন।