মার্চে রেমিটেন্স বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ

সদ্য বিদায়ী মার্চ মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩০ কোটি ৪ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এসময় প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন একহাজার ৭৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। সোমবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এই রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফেরে। গত অক্টোবর মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে। যা গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী জুন (২০১৮) নাগাদ অর্থাৎ এই অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স প্রবাহ একহাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। হুন্ডি প্রতিরোধে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে, এর প্রভাবেও রেমিটেন্স বাড়ছে। ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আনার চেষ্টা করছে। সে কারণেও রেমিটেন্স বাড়বে। এছাড়া শ্রমশক্তি রফতানিও বেড়েছে। এরও একটা প্রভাব পড়বে পুরো ২০১৮ সাল জুড়ে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। মার্চ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দু’টি ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার এসেছে।

বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৭১ ডলার এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪.৪৭ শতাংশ।

রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে অগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিটেন্স আনতে অতি বেশি উৎসাহী হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে প্রায় ১৪.৪৮ শতাংশ কম রেমিটেন্স আসে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিটেন্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।