গাইবান্ধায় ডায়রিয়ার প্রকোপে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকহারে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টার পর থেকে আজ রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে আরো ৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
এরমধ্যে রবিবার সকালে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৩০ জনকে। এর আগে গত বুধবার ৩৩ জন, বৃহস্পতিবার ৪৬ জন ও শুক্রবার ৪৮ জন এই ১২৭ জনের মধ্যে শনিবার সকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১০৩ জনকে। গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকাল থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৩৩ জনকে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৩ জন মেডিকেল অফিসার সকাল, বিকেল ও রাতে শুধু ডায়রিয়া রোগীদের সেবায় কাজ করবেন। একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে ও হাসপাতালের ভেতরের করিডরে মেঝেতে বিছানা তৈরি করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের সেবায় স্কাউটসের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। জরুরী বিভাগের সামনে গাইবান্ধা পৌরসভার উদ্যোগে টিন দিয়ে একটি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে জায়গার সংকুলান না হলে এখানে রোগী ভর্তি করে রাখা হবে।
এদিকে রবিবার সকালে ঢাকার মহাখালীর রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ৬ সদস্যের একটি অনুসন্ধানী দল গাইবান্ধায় এসে মানুষের মল ও পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা আগামীকাল সোমবারও গাইবান্ধায় কাজ করবেন।
এরও আগে শনিবার বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুই সদস্যের একটি দল পৌরশহরের ডেভিডকোম্পানি পাড়ায় এসে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বগুড়া ফিরে যায়। দলটি পানি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. অমল চন্দ্র সাহা মুঠোফোনে বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যখানে থেকে ডাক্তার ও নার্স নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণ রয়েছে। অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে, হাসপাতালের ভেতরে জায়গা সংকুলান না হলে সেখানে রোগীদের স্থানান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে পানির নমুনা সংগ্রহ করার ফলাফল আগামীকাল সোমবার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দলটি ঢাকায় ফিরে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে প্রতিবেদন জানাবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে দিনদিন বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপে প্রায় ১ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়। পরে ঢাকার রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল গাইবান্ধায় এসে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে পানিবাহিত রোগের মাধ্যমে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল বলে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।