ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর ঘোষণা বিএবি-র 

ব্যাংক ঋণের সুদ হার আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে আবারও এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এজন্য ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ৩ শতাংশ কমানো এবং ব্যাংকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকের রাখার দাবি জানানো হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে ব্যাংকিং খাতের চলমান সঙ্কট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

বিএবি সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউনুসুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শফিকুল আযম, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শিল্পপতি সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট চলছে। ব্যাংক খাতের এ সঙ্কটকালীন মুহূর্ত কীভাবে দূর করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়। তবে তিনটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকের রাখার দাবি করেছি। অর্থমন্ত্রী মৌখিকভাবে আমাদের সম্মতি দিয়েছে। এখন থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রাখা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি আমানতের মাত্র ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান রয়েছে। আর আমানতের ৭৫ শতাংশ রাখা হয় রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে।

সরকারি ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা পড়ে আছে জানিয়ে বিএবি সভাপতি বলেন, জেনেছি সরকারি ব্যাংকগুলোতে এক লাখ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা টাকা নিতে চান না। কারণ এখানে নানা রকম সমস্যা থাকে। কিন্তু শিল্প ও বাণিজ্যের কারণে আমরা বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বেশি বিনিয়োগ করে ফেলেছি। তাই আমাদের অর্থ দরকার। সরকারি আমানত বাড়লে আমাদের সঙ্কট থাকবে না।

বিএবি সভাপতি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো টাকার সঙ্কট চলছে। তাই ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে নামিয়ে সাড়ে তিন শতাংশ করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। অর্থমন্ত্রী সায় দিয়েছেন। তবে কত কমানো হবে এ ব্যাপারে রোববার বৈঠক হবে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকবেন।

সাংবাদিকদে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতেও বলেন বিএবি সভাপতি। বলেন, নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হলে মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি হয়। বৈঠকে আর্থিক খাত নিয়ে রিপোর্টিং টেনে ধরতে ফাইন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন আইন প্রণয়ন করার লিখিত প্রস্তাব করেন তিনি।

নজরুল ইসলাম জানান, ৩ শতাংশ সিআরআর কমালে ৩০ হাজার কোটি টাকা তারল্য বাড়বে। এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পড়ে থাকে। বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এটি করা হয়। তবে আমাদের হিসাব বলছে, এটি ছাড়লে মূল্যস্ফীতি হেরফের হবে না।

ব্যাংক মালিকদের এ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সুদ হার নামিয়ে আনতে। আমরা অর্থমন্ত্রীকে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি সবাই মিলে সুদ হার নামিয়ে আনতে পারব। ১৫ শতাংশ হার সুদে অর্থ নিয়ে বিনিয়োগ করে কোনো ব্যবসায়ী মুনাফা করতে পারবে না। আমরা দীর্ঘদিন সুদ হার নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে এটি হঠাৎ বেড়ে গেছে। তবে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে আবার এক অঙ্গে সুদ হার নামিয়ে আনা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানা কথা হচ্ছে। আমি তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে পারছিলাম না। আজ কথা হলো। তবে আর্থিক খাতের রেগুলেটর না। গভর্নরকে নিয়ে রোববার আবারও বৈঠক করব। সেখানে নীতি ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর আরও কিছু সিদ্ধান্ত হবে।