বিজিএমইএ-কে আবারও অঙ্গিকারনামা জমা দিতে হবে

রাজধানীর হাতিরঝিলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ও কার্যালয় অন্যত্র সরাতে সংগঠনটির সময় চেয়ে করা আবেদনের ওপর আদেশ পিছিয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত বিষয়টি মুলতবি রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ওইদিন (সোমবার) বিজিএমইএ-কে আবারও অঙ্গিকারনামা জমা দিতে হবে।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।একই সঙ্গে সময় আবেদনে কিছু সংশোধন আনতে বলা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সংগঠনের নিকট থেকে আন্ডার টিকিং (অঙ্গীকারনামা) পাওয়ার শর্তে সময়ের আবেদন বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তাতে, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না, আবেদনে এমন আন্ডারটিকিং (অঙ্গীকারনামা) দিতে বলা হয়েছে।

গত বছরের ৮ অক্টোবর বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন আদালতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত বছর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে ছয়মাসের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ওই সময় শেষ হওয়ায় একই বছরের ২৩ আগস্ট আরও এক বছর সময় চেয়ে এ আবেদন জানায় বিজিএমইএ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেন আপিল বিভাগ। পরে এ সময় শেষ হওয়ার আগেই ফের একবছর সময় চেয়েছে বিজিএমইএ।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ী খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।

পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।

পরে একই বছরের ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে- তা ৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ।

ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল ও ভবন ভাঙতে ছয়মাস সময় দেন। পরবর্তীতে আরও একদফা সাত মাস সময় দেন।