রাশিয়ার বিপণি বিতানে অগ্নিকান্ডকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ
রাশিয়ায় সাইবেরিয়ার কেমেরোভোয় বিপণি বিতানে অগ্নিকান্ডকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু করেছে জনতা। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরখাস্তের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও পদত্যাগ দাবি করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রোববার রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কয়লা উৎপাদন কেন্দ্র কেমেরোভোর ‘উইন্টার চেরি মলে’ আগুনে ৬৪ জন নিহত হয়, যাদের ৪১ জনই শিশু। এখনো অন্তত ৮৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি স্বজনদের। যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু বলে জানায় ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিপণি বিতানটি লোকে লোকারণ্য ছিল। কি কারণে বিপণি বিতানটিতে আগুন লেগেছিল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মলে ‘গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগুন লাগার পর ফায়ার এলার্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং মল থেকে বের হওয়ার রাস্তাটিও বন্ধ ছিল।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং অপরাধপূর্ণ অবহেলার (ক্রিমিনাল নেগলিজেন্স) কারণে প্রাণঘাতী এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন। বুধবার রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছেন তিনি।
ক্ষোভের সঙ্গে পুতিন বলেন, “এখানে কি হচ্ছে? এটি যুদ্ধ নয় অথবা কোনো খনিতে অকস্মিক কোনো বিস্ফোরণও হয়নি। এখানে লোকজন, শিশুরা আনন্দ করতে এসেছিল। আমরা জনসংখ্যা নিয়ে কথা বলছি। এখানে এতগুলো মানুষকে কি কারণে হারালাম? কারণ, এখানে শাস্তিযোগ্য অবহেলা হয়েছে, কি খামখেয়ালিপনা!”
মঙ্গলবার প্রায় তিনশ’ বিক্ষোভকারী স্থানীয় সরকারের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড় হয়ে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। তারা ‘সত্য জানাও’ এবং ‘পদত্যাগ কর’ বলে শ্লোগান দেয়। তারা কেউ কেউ পুতিনের পদত্যাগও দাবি করে। বিক্ষোভকারীদের একজন আইগর ভোসৎরিকোভ চিৎকার করে তার স্ত্রী, বোন এবং দুই, পাঁচ ও সাত বছরের তিন সন্তান হত্যার বিচার চাইছিল। মলে আগুন লাগার সময় এই পাঁচজনের সবাই সিনেমা হলে ছিল এবং ওই সময় সিনেমা হলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে তার স্ত্রী তাকে ফোন করেছিলেন।“ সে ফোনে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করেনি। বরং সে ফোনে আমাকে গুডবাই বলেছে। আমার হারানোর আর কিছু নেই।”
আরেক এক নারী বলেন, “আগুন লাগার পর শিশুরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করে তাদের বাবা-মা কে ডাকছিল। তারা অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে ভেতরে পাঠাতে অনুরোধ করছিল।” অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বরখাস্তের দাবিতে ৭ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিক্ষোভের পর এক পর্যায়ে আঞ্চলিক ডেপুটি গভর্নর সের্গেই সিভিলেভ বাইরে বেরিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসে বিক্ষোভকারীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
গভর্নর আমান তুলেয়েভ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে বিক্ষোভকারীরা।