নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করলেও মরেছে না মশা!

রাজধানীজুড়ে বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও মরছে না মশা। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, মশা নিধন কর্মীরা নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করলেও মরে না মশা। ফলে মশা নিধন ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে মিরপুর এলাকায় মশা নিধনকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিয়মিতই ওষুধ স্প্রে করি। স্প্রে ম্যানরা ওষুধ ছিটানোর পর মশা পড়ে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার উড়ে যায়। এখন ওষুধের মান খারাপ না-কি ওষুধ বাড়াতে হবে তা বুঝতে পারছি না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল ইকবাল হোসেন তিতু বলেন, প্রতিদিন আটজন লোক প্রায় ৪০ লিটার ওষুধ স্প্রে করে। তবুও মশা কেন মরছে না তা বুঝতেছি না। তবে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় সব খাল-ডোবা-নালায় ওষুধ ছিটানো সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর মশা নিধন ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেন, মশা নিধনে হয় ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে না হয় ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হবে। তা না হলে মশা মরবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪ (মিরপুর) নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাহ সিংহ বলেন, মশা নিধনে প্রয়োজনীয় জনবল, ওষুধ, মেশিনসহ কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই এটি দেখেছেন। আমরা শুধু মনিটরিং করি। তবে কর্পোরেশনের আলাদা বাজেট না থাকায় খাল, ডোবা নালায় খুব বেশি ওষুধ দেয়া হয় না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম অজিয়র রহমান বলেন, সব ওয়ার্ডেই পাঁচজন করে মশক নিধন কর্মী দিনে দুইবার ওষুধ ছিটায়। এছাড়া মশা নিধনে হটলাইন চালু রয়েছে। কেউ অভিযোগ জানালেই সে এলাকায় কর্মী পাঠিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি অঞ্চলের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে মশা নিধন অভিযান চলছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ২৭৮ কর্মী ও ৩১৮টি ফগার মেশিন ব্যবহার হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিগত বছরের তুলনায় মশা নিধনে চলতি বছরে বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত কাউন্সিলরা সুপারভাইজারের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিদিন ১৮০০ লিটার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া এ বছর থেকে নতুন লার্বি সাইডিং ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

ঢাকা উত্তরের ওয়ার্ডগুলোতে পরিচালিত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লার্ভি সাইডিং- হস্ত চালিত এবং হুইল ব্যরো মেশিন। সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন ডোবা-নালা, জলাশয় ও অন্যান্য মশার প্রজনন স্থলে লার্ভি সাইড করা হয়। লার্ভি সাইডিং কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক লার্ভি সাইড (লিমবেট) ও ম্যালেরিয়া ওয়েল ‘বি’ (কালো তেল)। এডালটি সাইডিং (উড়ন্ত মশক নিধন কার্যক্রম)- সরকারি ছুটির ব্যতীত প্রতিদিন সূর্যাস্তের এক ঘণ্টা আগে থেকে এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত ফগার মেশিনের সাহায্যে উড়ন্ত মশা নিধন করা হচ্ছে।

ডিএনসিসি সূত্র বলছে, ওষুধে কাজ না হলে নতুন ওষুধ দিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া হবে। তখন ডোবা, নালাসহ মশার প্রজনন স্থানগুলোয় নতুন করে ওষুধ ছিটানো হবে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কল্যাণপুর, দারুস সালাম, কালশী, ভাষানটেক, নাখাল পাড়া, মহাখালী, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগরসহ বেশকিছু এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মশার উপদ্রবের কথা জানা গেছে। তারা বলেন, মশা নিধন কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই ওষুধ স্প্রে করে। কিন্তু মশা মরে না। স্প্রে করার পর বরং মশার উৎপাত আরও বাড়ে।