দেশীয় পণ্য ওয়ালটন ল্যাপটপ এখন বিশ্ববাজারে

দেশীয় বাজারে সাফল্যের পর এবার আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিকারক হিসেবে আর্বিভূত হলো বাংলাদেশ। দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করল ওয়ালটন। নাইজেরিয়ায় দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের ল্যাপটপ রপ্তানির মাধ্যমে এই উৎপাদক দেশ থেকে রপ্তানিকারক দেশে পা রেখেছে বাংলাদেশ। এর পুরো কৃতিত্ব ওয়ালটনের। দাবি অর্থমন্ত্রীর।

বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নাইজেরিয়ার সাথে ওয়ালটন ল্যাপটপ রপ্তানির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ শিল্পায়নের যুগ। আগামী আরো দুই যুগ বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম পরিমাপক হবে শিল্পায়ন। আর শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে উৎপাদন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওয়ালটন বিভিন্ন খাতে উৎপাদন নিশ্চিত করে যাচ্ছে। আমি তাদের এই অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানাই।

তিনি বলেন, এখনো দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও, শতভাগ উৎপাদন কেউ করতে পারছে না। কিন্তু ওয়ালটন তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এটি আমাদের জন্য ভাল লাগার সংবাদ। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আজ সকাল থেকেই ভাল খবর পাচ্ছি আমি। সকালে কথা বললাম নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের স্বীকৃতির সার্টিফিকেট আমার হাতে এসেছে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই সার্টিফিকেট তুলে দেব আমরা। আর এখন বিকেলে কথা বলছি, স্বাধীনতার মাসে রপ্তানিকারক হিসেবে দেশের অর্জন নিয়ে।

এর আগে নাইজেরিয়ায় ল্যাপটপ রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে নাইজেরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওয়ালটনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ইনঅগোরেশন সেরিমনি অব ওয়ালটন ল্যাপটপ এক্সপোর্টেশন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ওয়ালটনের পক্ষে রপ্তানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম। নাইজেরিয়ার পক্ষে ছিলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন বেজ নাইজেরিয়া লিমিটেডের পরিচালক ডেভিড নোনে।

পরে ওয়ালটনকে অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সরকারি সুযোগ সবার জন্যই সমান। কিন্তু ওয়ালটন সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে তারা প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন করে দেশে সুনাম কুঁড়িয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কম্প্রেসার এবং ল্যাপটপের মতো মানসম্পন্ন নতুন প্রযুক্তির বৃহৎ পণ্য উৎপাদনের তারা সফল হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার বক্তব্যে বলেন, ওয়ালটন ল্যাপটপ রপ্তানির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। তিনি চেয়েছিলেন দেশেই ল্যাপটপ কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন হবে এবং মেড ইন বাংলাদেশ লেখা নিয়ে তা রপ্তানি হবে। ওয়ালটন আজ তা সফল করলো। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও ওয়ালটনের পণ্য ব্যবহার করছেন। এমনকি তিনি নিজেই টাকা দিয়ে ওয়ালটনের পণ্য কিনেছেন। দেশে এখন বিশ্বমানের পণ্য তৈরি হচ্ছে এটি আমাদের জন্য আনন্দেরও।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ওয়ালটন প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে যে সাফল্য দেখিয়েছে তা অন্যান্য দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ওয়ালটন আমাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, দেশীয় ল্যাপটপ কম্পিউটার খাতের পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। কিন্তু সরকারি দিক-নির্দেশনা ও সহায়ক নীতির ফলে আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ড্রাস্ট্রিজে চালু হয়েছে দেশের প্রথম কম্পিউটার উৎপাদন কারখানা। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চমান সম্পন্ন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও মনিটরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য। এই কারখানার মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার ইউনিট ল্যাপটপ, ৩০ হাজার ইউনিট ডেস্কটপ এবং আরো ৩০ হাজার ইউনিট মনিটর। এর অর্থ বর্তমানে দেশের ল্যাপটপের চাহিদার পুরোটাই পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে ওয়ালটনের।

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, ইন্টেল-মাইক্রোসফট এবং বিজয় বাংলার সমন্বয়ে উচ্চমান বজায় রেখে ল্যাপটপ কম্পিউটার উৎপাদন করছে ওয়ালটন। যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রপ্তানি আদেশ আসছে। ওয়ালটনের তৈরি ল্যাপটপ কম্পিউটারের প্রথম রপ্তানি আদেশ এসেছে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ নাইজেরিয়া থেকে। শুরুতে ৫০০ ইউনিট ল্যাপটপ নাইজেরিয়ায় পাঠাচ্ছে ওয়ালটন। প্রতিবেশি দেশ নেপাল থেকেও ইতিমধ্যেই ল্যাপটপ রপ্তানির আদেশ পেয়েছে ওয়ালটন। ভুটান এবং পূর্ব তিমুরেও ওয়ালটন ল্যাপটপ রপ্তানির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সব মিলিয়ে প্রযুক্তি পণ্যের জগতে ‘সময় এখন বাংলাদেশের।’

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশের জন্য আসছে বেশকিছু সুখবর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশের পথে উত্তরণ হলো দেশের। এবার ল্যাপটপ কম্পিউটার উৎপাদক থেকে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হলো বাংলাদেশ।