সরকারি বরাদ্দ থাকলেও জমির কোন অংশ পাইনি অধিকাংশ ভূমিহীন পরিবার
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় হিন্দু-খ্রিস্টান-আদিবাসীসহ বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাস। উপজেলাতে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার আদিবাসী পরিবার বসবাস করে।
ঈশ্বরদীর মুলাডুলির, আটঘড়িয়া, লিখনহাটা, চকশ্রীরামপুর, পতিরাজপুর, ফরিদপুর, মুলাডুলি, লক্ষীকুন্ডা, পাকশী, গুড়িপাড়া, সড়াইকান্দি, দাশুড়িয়ার মাড়মী, খয়েরবাড়িয়া, মুনশীদপুর, কৈকুন্ডাসহ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে বাস করে। সংখ্যায় অনেক হলেও এদের জীবনযাত্রা নিম্মমানের। কেউ জমি চাষ করে, কেউ ভ্যান চালায় আবার কেউ কাজ করে কুলি-মজুরের। ভিটা-মাটিহীন এই পরিবারগুলো দিন এনে দিন খায়। আর যেদিন কোন কাজ করতে পারে না সেদিন থাকতে হয় না খেয়ে।
ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে তাদের সাথে কথা কবলে জানা যায়, ঈশ্বরদীর আটঘড়িয়ায় প্রায় ৬০/৭০ পরিবার আদিবাসী বসবাস করে। মুলাডুলির ফরিদপুরে বাস করে প্রায় ৫০/৬০ পরিবার আদিবাসী।
চকশ্রীরামপুরে নারায়ন চন্দ্র জানান, প্রায় ২০/৩০ পরিবার আদিবাসী বসবাস করে চকশ্রীরামপুরে। মুলাডুলির পতিরাজপুরে প্রায় ৭০/৮০ পরিবার আদিবাসী বসবাস করে। এছাড়াও পাকশীর গুড়িপাড়া বসবাস করে প্রায় ৬০/৭০ পরিবার আদিবাসী। অধিকাংশ আদিবাসী বসবাস করলেও সরকারি বরাদ্দের জমির কোন অংশ পাই নাই এসকল জনগন। সরকারি জমি প্রাপ্তির ইচ্ছা থাকলেও কেউ এ ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে নাই।
ঈশ্বরদীর একমাত্র মুলাডুলি ইউনিয়নের ডিলুনগরে সরকারি জমিতে বসবাস করছে ২০/২৫ ঘর আদিবাসী বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। বসবাসের স্থান পেলেও তারা পায় না কোন সযোগ-সুবিধা। রাস্তার ধারে এবং জনবসতি থেকে দূরে বসবাস করায় বিভিন্ন সময় প্রশ্ন জাগে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এছাড়া কোথাও সরকারি জমি পায় নাই ঈশ্বরদীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ফলে অন্যের জমিতে জীবন বাঁচাতে মাথা গুজে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। ঈশ্বরদীর যে সকল স্থানে প্রান্তিক আদিবাসি জনগোষ্ঠী বসবাস করছে তার বেশিরভাগই মুসলমান সম্প্রদায়ের জমি।
তাঁদের প্রয়োজনে বা অকৃতকার্য জমি ব্যবহার করে চাষের উপযোগী করে ফসল ফলাতে দেওয়া হয়েছে তাদের বসবাসের অনুমতি। এছাড়া কেউ কেউ আশ্রয়কারীর বাড়ির কাজের বিনিময়ে বসত করছে। ফলে এক রকম অনাকাংক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন। সরকারের শত শত এক জায়গা পতিত থাকলেও তাদের মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে। যাপন করতে হচ্ছে মানবেতর জীবন। ক্ষমতাশীল দলের নেতৃবৃন্দের জমিদখলের কারণে সরকারি জমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বরাদ্দ হচ্ছে না বলে মনে করেন তাঁরা।
খাস জমি বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঈশ্বরদী উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সন্তোষ সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে সরকারি খাস জমি বরাদ্দে প্রান্তিক ভূমিহীন কোন পরিবার পেয়েছে বলে আমার জানা নাই। এ ব্যাপারে প্রশাসন আমাদের কোন তথ্য জানায় নাই। ঈশ্বরদীর মাড়মী দিঘিতে কিছু খ্রিস্টান পরিবার বসবাস করে। এছাড়া বাকি সবাই বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা জমিতে বসবাস করে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঈশ্বরদী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত মুন্ডারী বলেন, আমরা আদিবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যের জমিতে বসবাস করি। বিভিন্ন কথা শোনার পরও আমরা মুখ বুজে অন্যের জমিতে বসবাস করছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্ণা ধরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সুফল পাই নাই।
আদিবাসী পরিষদের পাবনা জেলা কমিটির উপদেষ্টা রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ঈশ্বরদীতে সরকারি জমি বরাদ্দের সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা ঈশ্বরদীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পায় নাই। এর কারণ হিসেবে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের কর্তৃত্বকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতাশীল দলের নেতৃবৃন্দের জমিদখলের কারণে সরকারি জমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বরাদ্দ হচ্ছে না। সরকারি জমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি চান।
সরকারি খাস জমি প্রাপ্তিতে উদ্যোগ চলমান আছে কি না এ বিষয়ে জানার জন্যে ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামিম আক্তারকে বার বার কল করা হলেও তা রিসিভ হয় নাই।