দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার জড়িয়ে যাচ্ছে খালেদার জামিন আদেশ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে আপিল বিভাগ জামিন দিলেও কুমিল্লার মামলায় জামিন না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুক্তি পাবেন না। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে যাচ্ছে। এরইমধ্যে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ও রাষ্ট্রপক্ষ।
পাশাপাশি লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে লিভ টু আপিলে পৃথক আরও দুটি প্রার্থনা (প্রেয়ার) জানিয়েছে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে হাইকোর্টের পর এবার আপিল বিভাগেও খালেদা জিয়ার জামিনে কারামুক্তি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছে।
নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে শুনানি শেষে গত ১৩ মার্চ জামিন পান তিনি। কিন্তু হাইকোর্টের দেওয়া এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই দুটি আবেদনের বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ মার্চ সকালে আপিল বিভাগ শুধুমাত্র দুদকের আইনজীবীর শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে (দুদক আইনজীবীকে) লিভ টু আপিল করার নির্দেশ দেন। এসময় দুদকের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেন এবং একইদিনে (১৮ মার্চ) দুদকের লিভ টু আপিলের শুনানির দিন ধার্য করেন।
এরপর আপিল বিভাগের দেওয়া হাইকোর্টের জামিন স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ওইদিন (১৪ মার্চ) দুপুরে চেম্বার আদালতে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই (প্রত্যাহার) আবেদনটি ১৮ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দুদকের লিভ টু আপিলের সঙ্গে শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে এখানেই শেষ নয়।
পরদিন (১৫ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। সেই সঙ্গে ওই লিভ টু আপিলে আরেকটি প্রার্থনা চায় দুদক। খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে দুদকের লিভ টু আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ যেন স্থগিত থাকে সেজন্য আরেকটি পৃথক প্রার্থনা করেছে দুদক।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগ আমাদেরকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন। আমরা দুদকের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল করেছি। একইসঙ্গে এই লিভ টু আপিলের শুনানিকালে খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ যেন স্থগিত রাখা হয় সেজন্যও আরেকটি প্রার্থনা রেখেছি। আগামী ১৮ মার্চ এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
এদিকে দুদকের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে দুদকের মতো পৃথক আরেকটি প্রার্থনাও জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
তবে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের কারণে বসে নেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ দুটি লিভ টু আপিল দায়ের করেছে। একইসঙ্গে তারা এর শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে লিভ টু আপিলের প্রার্থনা করেছে। তবে এ সংক্রান্ত শুনানিকালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তা প্রত্যাহার চেয়ে আমরাও পৃথক দুটি (দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে) আবেদন করেছি। সুতরাং আশা করছি, আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনটি গ্রহণ করবেন এবং হাইকোর্টের আদেশের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবেন।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেন, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল এবং তাদের বিরুদ্ধে আপিলের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আমাদের দুটি আবেদনের শুনানি একইসঙ্গে রবিবার (১৮ মার্চ) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট) ৯ ও ১০ ক্রমিকে রাখা হয়েছে। ওইদিন (১৮ মার্চ) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে উভয়পক্ষের চারটি আবেদনের শুনানি হবে।
এদিকে আপিল বিভাগে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিরুদ্ধে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে ইতিমধ্যে শুনানির যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
প্রসঙ্গত: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবাসে আছেন খালেদা জিয়া। এ মামলায় উচ্চ আদালতে আপিলের পর গত ১৩ মার্চ তাকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করে। চেম্বার জজ তা খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রেখে উভয় পক্ষকে লিভ টু আপিল করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, কুমিল্লায় দায়ের হওয়ায় আরেকটি নাশকতার মামলায় ১২ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (পি ডব্লিউ) জারি করে আগামী ২৮ মার্চ তাকে শরীরে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার ৫নং আমলি আদালতের বিচারক মো. মুস্তাইন বিল্লা। এর ফলে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার আদালতে উপস্থিত হতেই হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এরমধ্যে জামিন না পেলে জেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রহরায় তাকে কুমিল্লায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে।