ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ইউএস-বাংলাসহ বীমা থেকেও টাকা পাবেন

নেপালের কাঠমুন্ডুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইউএস-বাংলা। এর বাইরে তারা বীমা কোম্পানি থেকেও বেশ কিছু টাকা পাবেন বলেও জানিয়েছে। জানা গেছে, এভিয়েশন বীমার আওতায় ইউএস-বাংলার যাত্রীসহ সম্পদের সব ঝুঁকি গ্রহণ করেছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়াও আন্তর্জাতিক এভিয়েশন বীমা করা হয়েছে ‘কে এম দাস্তুর’ নামের একটি ব্রিটিশ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে।

এদিকে দুর্ঘটনার পরই এই দুটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিহত যাত্রীদের স্বজন ও আহতরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ পাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স ছাড়া চলাচলের সুযোগ নেই। ইন্স্যুরেন্সের আওতায় বিমান, যাত্রী ও পাইলটদের আলাদা ‘মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাইলটদের ১ থেকে ২ লাখ ডলার আর যাত্রীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০ হাজার ডলার ইন্স্যুরেন্স সুবিধা থাকে। এই হিসাবে নিহত প্রত্যেক যাত্রীর স্বজনরা ন্যূনতম ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বীমা দাবির টাকা পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, দ্রুত বীমার দাবি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। দাবি নিষ্পত্তির কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার দিনই একদল লস এডজাস্টার (তদন্ত কর্মকর্তা) ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পরদিন পৌঁছেছে আরেকটি লস এডজাস্টার দল। সেখানে তারা ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলেই বোঝা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সে অনুসারে দাবি পরিশোধ করা হবে। যাত্রীদের পরিচয় যত দ্রুত নিশ্চিত হওয়া যাবে, তত দ্রুত তাদের দাবি পরিশোধ করা করা হবে বলেও জানান শফিক শামিম।

বিমান দুর্ঘটনার পরপরই বীমা দাবি করে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের একপাশে আগুন ধরে যায়। এরপর পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী আর ৪ ক্রু মোট ৭১ জন আরোহী নিয়ে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল উড়োজাহাজটি। এ ঘটনায় ২৮ বাংলাদেশিসহ নিহত হয়েছেন ৫১ জন। বিমানটিতে ৩৬ জন বাংলাদেশি যাত্রীর মধ্যে ৪ জন ক্রু এবং ২২ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ১০ জন।

এর আগে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বীমাকারী ও পুনর্বীমাকারীর সঙ্গে বৈঠকে করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামিম জানান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস এর দুর্ঘটনা কবলিত বিএস ২১১ ফ্লাইটের জন্য কমপ্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ নেওয়া হয়েছে। মোট লায়াবিলিটি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে উড়োজাহাজের জন্য কাভারেজ ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বিমানের টিকিট কাটলেই যাত্রীরা বীমার আওতায় চলে আসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম (গণসংযোগ) বলেন, বীমা প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ইতোমধ্যে তাদের তদন্ত শুরু করেছে। তবে বীমার টাকা পেতে কত সময় লাগবে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা দিতে পারেননি তিনি।