শাহজালালে চাপা আতঙ্কে যাত্রীরা
হাতে পাসপোর্ট, লাইনে দাঁড়িয়ে চেক-ইন করার অপেক্ষা। কখনো ঘড়ি দেখছেন কখনো বা ফ্লাইট শিডিউলের মনিটর। লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন সাড়ছেন। আলোচনা করছেন ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের বিধ্বংস হওয়ার সংবাদ নিয়ে। নিজেদের ফ্লাইট নিয়েও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সোমবার সকালে সরেজমিন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের ভেতরে এমন চিত্র দেখা যায়। নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৫০ জনে মারা গেছেন। বিমানটিতে ৩২ জন বাংলাদেশি ও ৩৩ জন নেপালের নাগরিক ছিলেন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় শোকাহত পুরো বাংলাদেশ।
বিমানবন্দরে কথা হয় অ্যাডভোকেট সাঈদের সঙ্গে। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আজ (সোমবার) কাঠমান্ডুগামী (ফ্লাইট বিজি-০০৭১) একটি ফ্লাইটে নেপাল যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘গতকালের (রোববার) সংবাদ শুনে খুবই খারাপ লাগছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে আজ (সোমবার) কাঠমান্ডু যেতাম না।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কলকাতাগামী বিএস-২০১ ফ্লাইটের এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল (রোববার) যা হয়েছে তা আমাদের সঙ্গেও হতে পারতো। বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার সম্বাবনা অনেক কম। এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ যাত্রীদের শতভাগ ফ্লাইট সেফটি নিশ্চিত করা। বাকিটা ভাগ্য।’
ইমিগ্রেশন শেষ করে বোর্ডিং গেটে অপেক্ষারত রায়হান হোসেন নামের আরও এক যাত্রী বলেন, ‘এতগুলো মানুষ একসঙ্গে চলে যাওয়ার শোক বলে প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা চাই তাদের স্মরণে ১ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হোক।’ সরেজমিন বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের সবার মুখে মুখে বিমান দুর্ঘটনার আলোচনা। কেউ বলছেন দুর্ঘটনার দায় পাইলটের, কেউ বলছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরের। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিবেশটাও শোকাবহ।
উল্লেখ্য, গতকাল (সোমবার) নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। নেপাল সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৫০ জনের নিহত হয়েছেন।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর বলেছেন, দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট টার্বোপ্রোপ বিমানটি ৬৭ আরোহী ও ৪ জন ক্রু নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ পুরুষ, ২৭ নারী ও দুই শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩৩ জন নেপালের নাগরিক।
শাহজালাল বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের চেক-ইন এর তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপ ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। এদের মধ্যে ৬৫ যাত্রী প্রাপ্ত বয়স্ক ও ২ জন শিশু ছিল।