জামিনে মুক্তি পেলে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৪ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে এ জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করেন দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। তবে দুপুরে তা স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত। একইসঙ্গে আগামীকাল বুধবার এ আবেদন দুটি পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে তা শুনানির জন্য আদেশ দেন আদালত।

এদিকে একমাস ধরে কারাগারে বন্দি থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আশাবাদী তার আইনজীবী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে তারা এ বিষয়ে নিজেদের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, আগামী রবিবার তার জামিন হতে পারে। ৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার আইনজীবীরা তাদের এই আশার কথা জানান। একইসঙ্গে শুক্রবার এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একই কথা বলেছেন।

কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের সাক্ষাৎ এবং এসব দলীয় নেতাদের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গুঞ্জন উঠেছে, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইবেন। রাজনৈতিক সমঝোতা হলে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনেও যেতে পারেন তিনি। সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করবেন, এর মধ্যে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপি বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানকে ছাড়াই অংশগ্রহণ করবে।

অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হাত নেই। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আদালতেই নির্ধারিত হবে তিনি জামিন পাবেন কিনা। তবে যদি তিনি প্যারোল চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করে দেখবে।

এ ধরনের গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আইনি লড়াই এবং রাজপথের আন্দোলনেই তাকে আমরা মুক্ত করে আনবো। সরকার বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য নানা চেষ্টা করছে। এসব গুজব সেই চেষ্টারই অংশ। তার জামিন বিলম্বিত করার জন্য যতো কলাকৌশল করা হোক না কেন, যতো ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, আমি আশাবাদী আগামী সপ্তাহে তার জামিন হবে।

‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়া জামিনের পর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন কিনা, এমন প্রশ্নে মওদুদ বলেন, তার অবশ্যই অসুখ থাকতে পারে। এই বয়সে নানা ধরনের অসুখ থাকাটা স্বাভাবিক। আমারও নানা রকমের অসুখ আছে। কিন্তু তিনি কোথাও যাবেন না, যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তার মনোবল অনেক শক্ত। তিনি জনগণের মাঝে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার স্বজনরা তার দীর্ঘ কারাবাসের আশঙ্কা করছেন। তার বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আত্মীয়রা চান যেকোন ভাবে খালেদার মুক্তি।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। কারাগারে রেখে যারা নির্বাচনের কথা ভাবছেন তারা অলিক স্বর্গে বাস করছেন। এদিকে আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের দুই বিচারপতি। স্বাক্ষরের পর তা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দফতরে (সেকশনে) গেছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জানান, স্বাক্ষরিত এ আদেশের কপি সেকশন থেকে বিচারিক আদালতে পাঠানো হবে। এরপরই বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান আদালতে জামিননামা দাখিল করবেন খালেদার আইনজীবীরা। এ জামিননামা স্বাক্ষরের পরই তা যাবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুদক।