ওরাল স্যালাইন আবিষ্কারক ও হামদর্দের পরিচালক রফিকুল ইসলাম আর নেই
বীর মুক্তিযোদ্ধা হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের মোতাওয়াল্লী ও মার্কেটিং এর সিনিয়র পরিচালক ড. হাকীম রফিকুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাস্থ একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রাত ১০.৫০টায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নি ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের মোতাওয়াল্লী ও মার্কেটিং এর সিনিয়র পরিচালক ছিলেন। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টি, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং জার্নাল কমিটির সম্মানিত সদস্যও ছিলেন এবং একই সাথে হামদর্দ পাবলিক কলেজের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পলন করেছেন খুব সফলতার সাথে।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, পুত্রবধূ ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। ড. রফিকুল ইসলাম ১৯৫০ সালের ০১ জুন মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার পশ্চিম কুমারভোগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি দেশ-মার্তৃকার টানে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিক্রমপুর অঞ্চলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর,বি এর সাবেক চিফ ফিজিশয়ান ড. রফিকুল ইসলাম ওআরএস এর উন্নতিকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশে অতি পরিচিত ওরাল স্যালাইন তার হাত ধরেই পূর্ণতা লাভ করেছে।
গতকাল ৫ মার্চ সকালে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া বয়স সংক্রান্ত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র, দুই কন্যা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে তার সাবেক সহকর্মীরা।
১৯৩৬ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. রফিকুল ইসলাম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেন। পরবর্তিতে ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন ইংল্যান্ডে। আইসিডিডিআর,বি-তে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে সেখানকার চিফ ফিজিশিয়ান থাকাকালীন অবসরে যান।
একাত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবিরে অসংখ্য বাংলাদেশি আশ্রয়গ্রহণ করেন। সেখানে মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিল কলেরা। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যে স্যালাইন দেওয়া হতো তা ফুরিয়ে যায়। তখন অসংখ্য রোগীর জীবন বাঁচিয়েছিল ওআরএস।
স্বাধীনতার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওআরএক-কে স্বীকৃতি দেয়। পরে ধীরে ধীরে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের বাড়ি বাড়ি এ স্যালাইন পৌঁছে দেয় বাংলাদেশি এনজিও ব্র্যাক।