এক ভূতের বাচ্চার জন্যেই কি এভাবে রক্তাক্ত হতে হয়েছে জাফর ইকবালকে?
দীর্ঘ পরিকল্পনার পরে হত্যার উদ্দেশ্যে শাবি ক্যাম্পাসেই শনিবার ড. জাফর ইকবালের উপর হামলা করে ফয়জুল। আলোচিত এ মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ফয়জুল দাবি করে, জাফর ইকবালের ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ নামক উপন্যাস লিখে নবী সোলায়মান (আ.)-কে ব্যঙ্গ করেছে। তার লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছে।
‘জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে হত্যা করার জন্য হামলা করেছি। উনি নিজে নাস্তিক এবং অন্য সবাইকেও নাস্তিক বানানোর জন্য প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তার লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছে।’
ফয়জুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আরো জানান, ফয়জুল স্বাভাবিকভাবেই তথ্য দিয়েছে। জাফর ইকবালকে হত্যা করতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে দিনের পর দিন তথ্য সংগ্রহ করেছে ফয়জুল। জাফর ইকবালের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করেছে সে। এমনকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে খেলাধুলাও করেছে সে।
হামলার দিন সকালেই ক্যাম্পাসে আসে ফয়জুল। দুপুরের দিকে হঠাৎ অধ্যাপক জাফর ইকবালকে একটি অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে বসে থাকতে দেখে সে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা কালো টি শার্ট পরিহিত ছিল। তারা জাফর ইকবালকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময় সে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। জাফর ইকবালের কাছে যেতে একটি ফন্দিও আঁটে সে। সন্দেহ এড়াতে বাসা থেকে কালো টি শার্ট পরে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে ছুরি। অন্যদের মতো কালো টি শার্ট পরেই জাফর ইকবালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় ফয়জুল। জাফর ইকবালের পাশ থেকে শিক্ষার্থীরা একটু দূরে সরে গেলে হামলা চালায় সে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী ‘স্বপ্রণোদিত’ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ হামলার দায় কোনো জঙ্গি সংগঠন স্বীকার করেনি। ফয়জুল কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেনি। তবে ফয়জুল স্বপ্রণোদিতভাবে হামলা করেছে এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে রাজি নন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। সে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কিনা এবিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগের এক অনুষ্ঠানে হামলার শিকার হন জাফর ইকবাল। ফয়জুল নামের এক যুবক তার মাথা, হাত ও পিঠে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ওই যুবককে আটক করে। আহত অবস্থায় জাফর ইকবালকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ওই রাতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সিএমএইচে আনা হয়। এখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন জাফর ইকবাল।