রবির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ রাখার নির্দেশনা বহাল

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকির অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ রাখাসংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিন্ধান্ত স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এনবিআরের আবেদনের শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছে চেম্বার আদালত।

হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ আপিল বিভাগে আটকে যাওয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিন দিনের জন্য জব্দ রাখার নির্দেশনা বহাল থাকছে। প্রায় ১৯ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে রবির অ্যাকাউন্ট তিন দিনের জন্য জব্দ রাখতে সব ব্যাংকে যে চিঠি এনবিআর পাঠিয়েছিল, হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মঙ্গলবার তা স্থগিত করে দেয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে এনবিআরের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের আদেশ তিন দিনের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে।

এর ফলে এনবিআরের নির্দেশনা কার্যকর করতে কোনো আইনি বাধা থাকছে না বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।রাষ্ট্রপক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। অন্যদিকে রবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম।

এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সব ব্যাংকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল রবির করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে। সে সময় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির সবশেষ আর্থিক বিবরণী এবং সিম বিক্রির কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়।

সেই কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রবি অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট, কম প্রদর্শিত সিমের ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট এবং বিটিসিএল-কে প্রদত্ত সেবার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ মোট ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে।

এনবিআরের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয়। আদেশে এনবিআরের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট। আর এনবিআরের ওই চিঠি কেন সংবিধান ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে এনবিআর চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বুধবার বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে এলে হাই কোর্টের আদেশ তিন দিনের জন্য স্থগিত করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট বলছে, অন্য অপারেটররা নির্ধারিত সময়ে ভ্যাট দিলেও রবি দেয়নি। এ কারণে ‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে’ তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে রবি আজিয়াটা লিমিটেড বলছে, কর ফাঁকির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাদের সঙ্গে ‘দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে’ এনবিআর এ ব্যবস্থা নিয়েছে।

এর আগে প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রবিকে চিঠি পাঠিয়েছিল এনবিআর। সে সময় রবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ভিত্তিহীন’ অডিটের মাধ্যমে এনবিআর ‘অন্যায্য’ দাবি করছে।