পপ গুরুর জন্মদিন, নিরবেই পার হচ্ছে দিনটি

‘গুরু’ নয়, ‘আজম ভাই’ সম্বোধনটি পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু সবার ভালোবাসা তাকে ‘গুরু’ করে তুলেছিলো। সেই গুরুর জন্মদিন কাটছে নিরবে-নিভৃতে। বাংলাদেশের পপ সঙ্গীতাঙ্গনের সব তারকা নির্দ্বিধায় ভালবাসা ও অসীম শ্রদ্ধায় আজম খানকে বসিয়েছেন আকাশসম সম্মানের আসনে। তবে বিশেষ এই দিনটি আজকে গুরুত্ব পায়নি মিডিয়ায়।

পপসম্রাট ও মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। সঙ্গীত অঙ্গনে তিনি আজম খান নামেই পরিচিত। বাংলাদেশের এই রক গানের জনকের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০ নম্বর কোয়ার্টারে। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন।

স্বাধীনতার পর তার সহযোদ্ধারা সবাই ফিরে যান নিজ নিজ পেশায়। কিন্তু তরুণ আজম খান অস্ত্র জমা দিয়ে নেমে পড়েন অন্য এক উন্মাদনায়। গানে গানে তারুণ্যের রক্তে তুলেন মাতম। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তার জন্মদিন। কোনো আয়োজন ছাড়া নিরবেই পার হচ্ছে পপগুরুর জন্মদিনটি। মূলধারার পত্রিকা, টেলিভিশন বা অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলেপাতে গুরুর জন্মদিন নিয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো আয়োজন নেই। দিনটিকে ঘিরে আজম খান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেরও খবর পাওয়া যায়নি।

১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে বসবাস শুরু করে আজম খানের পরিবার। একই বছর কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন আজম খান। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

মাত্র ২১ বছর বয়সে ঢাকা উত্তরের সেকশন কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আজম খান। দেশ স্বাধীন হবার পর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আখন্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ), আরও কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’। ১৯৭২ সালে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিটিভিতে। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দু’টো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় ‘উচ্চারণ’।

তার ১৭টি গানের অ্যালবামসহ বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবাম প্রকাশ হয়। আজম খানের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো- আমি যারে চাইরে, অভিমানী তুমি কোথায়, একদিন-তো চলে যাবো, জীবনে কিছু পাবো নারে, আসি আসি বলে তুমি আর এলেনা, ও চাঁদ সুন্দর চাঁদ, চুপ চুপ অনামিকা চুপ, হারিয়ে গেছো খুঁজে পাবোনা, ঘুম আসেনা ইত্যাদি। আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে ২০১১ সালের ৫ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর।