আজ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদন শুনানি আজ রবিবার দুপুর ২টায় হওয়ার কথা রয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হবে। খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে কি না কিংবা জামিন প্রশ্নে রুল জারি করা হবে কি না শুনানি শেষে সেই সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

হাইকোর্টের রোববারের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি ৩৬ নম্বরে রয়েছে। দুপুর ২টায় আপিল ও জামিন আবেদনের শুনানি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি স্থগিত করেন তার অর্থদণ্ড।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে আদালত শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেন। এ আদালতের আজকের কার্যতালিকায় ৩৬ নম্বরে রয়েছে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন। আগের আদেশ অনুযায়ী আজ দুপুর ২টায় এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য নির্ধারিত রয়েছে।

নিম্ন আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজা বাতিল চেয়ে আপিল শুনানির জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ মামলায় সাজা হিসেবে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের করা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছেন। হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মামলার যাবতীয় নথি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বয়স, অসুস্থতা, সামাজিক অবস্থানসহ ৩২টি যুক্তিতে জামিন চাওয়া হয়েছে। ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জাটিলতায় ভুগছেন। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর বাঁ হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনের কারণে তাঁর গিটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এমনকি হাঁটাহাঁটি না করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ রয়েছে। আবেদনকারী একজন নারী।

কোনো ফৌজদারি মামলায় পাঁচ বছর বা তার কম সাজা হলে আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট গ্রহণ করার পরপরই জামিন দেওয়ার অনেক নজির রয়েছে। কম সাজার ক্ষেত্রে জামিন দেওয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের অনেক আদেশও রয়েছে।

এর আগে দুদকের মামলায় তিন বছর সাজা হওয়ার পর কক্সবাজারের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর কারাগারে যেতে হয়। এর কয়েক দিন পর ১০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। তার আপিল শুনানির জন্য ১৬ নভেম্বর গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এদিনই তাঁকে ছয়

মাসের জামিন দেওয়া হয়। ২০ নভেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান বদি।

এ ছাড়া দুদকের মামলায় দুটি ধারায় ঝিনাইদহ-২ আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমানের ১০ বছরের সাজা হয় গত বছর ২৫ অক্টোবর। এর কয়েক দিন পর ৩০ অক্টোবর ঝিনাইদহের আরেক বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য আবদুল ওহাবের আট বছরের কারাদণ্ড হয়। সাজার দিনে এই দুই সাবেক সংসদ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর কয়েক দিন পর হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

তবে দুদক আইনের কোনো মামলায় আদেশ দেওয়ার আগে দুদককে শুনানির জন্য যুক্তিসংগত সময় দেওয়ার বিধান করা হয়েছে ২০১৩ সালে। এ আইনের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানির প্রস্তুতির জন্য হাইকোর্ট দুদককে সময় দিয়েছেন।

দুদক ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা মডেল থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে। এতে খালেদা জিয়া, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আরাফাত রহমান কোকো মারা যান। এ কারণে তাঁর বিচার হয়নি। পরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ বিচার শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সব আসামিকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি এ রায়ের জাবেদা নকল পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়া।