অভিবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫ দফা

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বার্ষিক সংসদীয় শুণানির শেষ দিন শুক্রবার বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ডেলিগেশনের দলনেতা মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকটের ব্যাপারে স্থায়ী অবসানে ৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

বাংলাদেশের সাবেক এই মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘আমরা সংসদ সদস্য। আমরা সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে আইন প্রণয়ন করি। সংসদ সদস্য হিসেবে ২৩ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আইপিইউ’র এই বার্ষিক সংসদীয় শুণানিতে বৈশ্বিক অভিবাসন কমপ্যাক্টে বিবেচনার জন্য এই সভায় আপনাদের সামনে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তুলে ধরছি।

এগুলো হচ্ছে

১. এমন কোন আইন পাশ করা যাবে না যা নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়মিত অভিবাসনের পরিপন্থী;

২. অভিবাসীদের মর্যাদা, মানবাধিকার ও স্বার্থ বিরোধী আইনও যেন আমরা পাশ না করি;

৩. অভিবাসী অবস্থা নির্বিশেষে অভিবাসীদের মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রেখে আইন পাশ করতে হবে;

৪. পাশকৃত সকল আইনে নাজুক অবস্থায় পতিত অভিবাসীদের সুরক্ষার কথা থাকতে হবে;

৫. পাশকৃত আইনসমূহে অভিবাসী পাচার, প্রতারণা ও ট্রাফিকিং এর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে’।

তিনি সভায় অংশগ্রহণকারী সকল সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আসুন আমরা সকলে জাতীয়তা, আমলাতন্ত্র ও নিরাপত্তা কেন্দ্রিক জটিলতার উর্ধ্বে উঠে অভিবাসনের এই বৈশ্বিক কম্প্যাক্টের জন্য প্রাধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর বাস্তবায়ন ও প্রশমন প্রক্রিয়ার উপর জোর দেই, যাতে ‘কেউ পিছনে পড়ে না থাকে’।

এর আগে সংসদ সদস্যগণের ভূমিকা’ শীর্ষক বার্ষিক সংসদীয় শুনানীর এক সাইড ইভেন্টে প্যানেলিস্ট হিসেবে সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আমাদেরকে অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক নীতির ঘাটতি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে পথ দেখায়।এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের যে শরনার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত নিউইয়র্ক ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ‘অভিবাসনের বৈশ্বিক কমপ্যাক্ট” ধারণাটি এনেছিল এবং এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবনা অন্যান্য দেশ গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে এই কমপ্যাক্টটি হবে অভিবাসন বান্ধব ও প্রাধিকারভিত্তিক যা বৈশ্বিক অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে”।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করে ইসরাফিল এমপি বলেন, ‘আমরা চাই বাস্তুচ্যুত এসকল মিয়ানমারের নাগরিক স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাবে’।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছিলেন তার উল্লেখ করেন।

নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়মিত অভিগমনের কম্প্যাক্টের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষা, শ্রমবাজারের প্রয়োজনে নতুন নতুন চ্যানেল উন্মুক্ত করা, অভিবাসীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াসহ বেশ কিছু প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এমপি ইসরাফিল আলম।

মাইগ্রেশন কম্প্যাক্টের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের বিবিধ ভূমিকা ও দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আমরা অভিবাসনের উপর একটি ‘জাতীয় সংসদীয় ককাস’ গঠন করেছি। এই ককাস গ্লোবাল কম্প্যাক্টের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কনসালটেশনে নিয়োজিত রয়েছে’।

আইপিইউ’র বার্ষিক সংসদীয় শুণানীর দুদিন ব্যাপী এই শুনানিতে আরও অংশ নেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, ফখরুল ইমাম, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আয়েন উদ্দিন, রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি ও জেবুন্নেছা আফরোজ।