‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে বিএনপি দুর্নীতিকে আড়ালের চেষ্টা করছে’

দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় আদালতের আদেশে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের শীর্ষ নেতা কারাগারে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান, অনশন, স্মারকলিপি ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকা দলটির এমন কর্মসূচিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে প্রকাশ্যে অক্ষমতা হিসেবে প্রচার করার কৌশল। পাশাপাশি বিএনপির শীর্ষ নেতার এমন রায়কে দলের জন্য বড় একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারও হিসেবে দেখছে। তবে দুর্নীতির দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় দলের নেতাকর্মীদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল করে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন ক্ষমতাসীনেরা।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে বিএনপি দুর্নীতিকে আড়ালের চেষ্টা করছে। আদালতের রায়ে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির একমাত্র পথ আইনি প্রক্রিয়া। সেটা জানা সত্ত্বেও বিএনপি এ সমস্ত কর্মসূচি দিয়ে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টা করছে। হাতি-ঘোড়া পেছনে না পাওয়ায় বিএনপি সহিংস আন্দোলনে যেতে পারেনি বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তারা বলেছেন, বিএনপির এমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আছে কি-না সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে বড় কোনো অঘটন ঘটানোর আশঙ্কাও করছেন তারা। এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বলেও জানান নীতি নির্ধারকরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, হাতি-ঘোড়া পেছনে পায়নি বলে খালেদা জিয়ার শাস্তির পরও বিএনপি সহিংস আন্দোলনে যেতে পারেনি। দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় নেতাকর্মীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। নৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় সহিংস আন্দোলনে যেতে সাহস পায়নি। ‘বিএনপি যে ধরনের দল তাদের এ আচরণ অবিশ্বাস্য হিসাবেই ধরে নিয়েছে দেশের জনগণ’ এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান।

তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) অতীত কর্মকাণ্ডের ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই আবার ভুল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি-এটা রাজনীতিতে শুভ লক্ষণ। বিএনপি অবশিষ্ট শক্তি ক্ষয় করতে চায় না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, বিএনপির পলিসি অবশিষ্ট শক্তি ক্ষয় না করা। তারা (বিএনপি) অবশিষ্ট শক্তি নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে চায়। তাই সহিংস আন্দোলন করে শক্তি অপচয় করেনি। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় নৈতিকভাবে তারা পরাজিত হয়ে, সহিংস হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে তারা দুর্নীতিকে আড়াল করতে চাচ্ছে। বিএনপি ভালোভাবে জানে বেগম খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে দণ্ডিত। এ মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছে, এ মামলার সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ১০ বছর মামলা চলার পর দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে।

তিনি আরও বলেন, এখান থেকে শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড করে কোনো লাভ হবে না সেটা তারা জানে। এরপরও বিএনপি এ সমস্ত কর্মসূচির নামে জনগণের কাছে তারা যে দুর্নীতিবাজ দল সেটাকে আড়ালের চেষ্টা করছে।