আজ থেকে চালু হচ্ছে ফোর-জি সেবা

দেশে আজ সোমবার থেকে চালু হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) টেলিযোগাযোগ সেবা। তিন বেসরকারি অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক আজ সন্ধ্যায় এ সেবা চালুর লাইসেন্স পাবে। এর পরপরই তারা সেবাটি চালু করবে। অবশ্য সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক এখনো ফোর-জি চালুর নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ ঠিক করতে পারেনি।

ফোর-জি চালুর মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে দেশে থ্রি-জির মাধ্যমে দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। ফোর-জির মাধ্যমে সেই ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়বে। অবশ্য অবকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে দেশে ফোর-জি চালু হচ্ছে। ফলে দেশে কতটা ভালো মানের ফোর-জি সেবা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ফোর-জি চালু করতে আজ সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে চার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটকের হাতে লাইসেন্স তুলে দেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইতিমধ্যে ফোর-জি লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি ১০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে পরিশোধ করেছে চার অপারেটর। মোবাইল ফোন অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, আজ রাত থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা ফোর-জি সেবা পাবেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনার মতো বড় শহরেও সেবাটি চালু হবে। এ জন্য কারিগরি প্রস্তুতির কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলি ফোর-জি লাইসেন্স হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেবাটি চালুর কথা জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে গ্রাহকদেরও নতুন পথে চলা শুরু হবে। একই কথা বলেন রবি আজিয়াটার সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফোর-জি সেবা চালু করবে রবি। অপারেটরটির সূত্রে জানা গেছে, তারা প্রথম দিন থেকে সবচেয়ে বড় পরিসরে ফোর-জি নেটওয়ার্ক দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলালিংক সূত্রে জানা গেছে, তারাও আজ থেকেই গ্রাহকদের ফোর-জি সেবা দেবে। রাজধানীর পাশাপাশি খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বাংলালিংক গ্রাহকেরা সেবাটি সবার আগে পাবেন। টেলিটক আজ লাইসেন্স নিলেও সেবাটি চালু করতে তাদের দেরি হবে। কিন্তু কত দেরি হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানতে চাইলে টেলিটকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, টেলিটক যাতে দ্রুত অর্থ পায়, এ জন্য কাজ চলছে।

দ্রুতগতির ফোর-জি সেবা পেতে হলে নেটওয়ার্কের পাশাপাশি শক্তিশালী ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক অবকাঠামো দরকার। সেটি দেশে নেই। টেলিযোগাযোগ-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান বলেন, দ্রুতগতির ফোর-জির জন্য ব্যান্ডউইথ সরবরাহের অবকাঠামো এখনো খুবই দুর্বল। বিটিআরসির অবকাঠামো ভাগাভাগি নীতিমালা অনুযায়ী এনটিটিএন (নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) অপারেটর ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ফাইবার অপটিক ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারে না।

অবশ্য এনটিটিএন অপারেটরেরা দাবি করেছে, দ্রুতগতির ফোর-জি সেবার জন্য যে মানের ফাইবার অপটিক অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন, তা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আছে। বেসরকারি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের হেড অব গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক বলেন, সারা দেশে বর্তমানে দুই বেসরকারি এনটিটিএনের ৬০ হাজার কিলোমিটারের বেশি ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের উপজেলা পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রান্সমিশন সেবা দিতে এনটিটিএন অপারেটরেরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

ফোর-জি সেবা পেতে হলে সিম কার্ড ও হ্যান্ডসেটটি এ প্রযুক্তির উপযোগী হতে হবে। আপনার সিমটি ফোর-জি কি না, সেটি বিনা মূল্যে জানার সুযোগ আছে। গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোন থেকে *১২১*৩২৩২# ডায়াল করলেই ফিরতি বার্তায় সিমটি ফোর-জি কি না, তা জানতে পারবেন। রবির গ্রাহকদের এ জন্য ডায়াল করতে হবে *১২৩*৪৪ #। আর বাংলালিংকের গ্রাহকেরা মোবাইল ফোন থেকে 4G লিখে ৫০০০ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালে ফিরতি বার্তায় ফোর-জি সিমের বিষয়ে তথ্য পাবেন। টেলিটক তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য এখনো এ ধরনের কোনো সেবা চালু করেনি।

সিমটি যদি ফোর-জি না হয়, তাহলে সেটি সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করে নিতে হবে। সিম পরিবর্তন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি ও আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন) দিতে হবে।