‘রাতের আঁধারে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নতুন সাইনবোর্ড’

বগুড়ার গাবতলী-গোলাবাড়ী আঞ্চলিক সড়ক অতিক্রম করার পরই চোখে পড়বে তরফ সরতাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে বহুল আলোচিত জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এতিমখানা। আর সেখানেই রাতের আঁধারেই লাগানো হলো নতুন সাইনবোর্ড। আজ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পেছনঘেঁষে সদ্য লাগানো সাইনবোর্ডটি দেখা গেল। তাতে লেখা ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য, বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এই প্রতিষ্ঠানের নামে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় দাঁড়াইল মৌজায় স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় ৯ বিঘা জমি কেনেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় ২৫ বছর পার হতে চললেও সেখানে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছাড়া আর কিছু করা হয়নি। সময়ের ব্যবধানে সাইনবোর্ড মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ‍মামলার রায় ঘনিয়ে আসায় মাসখানেক আগে সেখানে আরেকটি নতুন সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।

জানা গেছে, স্থানীয় একজন বাসিন্দা ওই জমি বছরে এক লাখ টাকায় পত্তন নিয়ে চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, তার মামা আব্দুল গফুর, বেল্লাল হোসেন, মোফা, আয়েজ উদ্দিন, রকিবুল্লাহর কাছে থেকে সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু প্রায় ৮৭ শতাংশ জমি প্রতি শতক ১২০০ টাকা হিসেবে কেনেন।

তরফ সরতজা গ্রামের আব্দুল মালেক, আব্দুস সালেক, ধামাচাপা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল আজিজসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বাকি জমি হিরণ, লক্ষ্মী সরকার, রবি, করিম মণ্ডল, মজিবরসহ অন্যদের কাছ থেকে একই দামে কেনা হয়। ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘কেসের কারণে সাইনবোর্ড নতুন করা হয়েছে। এর আগের সাইনবোর্ড মরিচা পড়ে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়েছিল।’

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে ওই সময় চার লাখ টাকা তুলে এই ৯ বিঘা জমি ১২-১৩ জন মালিকের কাছ থেকে কেনা হয়। তবে জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও কার্যক্রম চালু না হওয়া পর্যন্ত জমির মালিকরা তা ভোগ করতে পারবেন- এমন চুক্তি ছিল। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালু হলে জমির মালিকদের যোগ্য সন্তানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু দিন গড়িয়ে গেলেও এসবের কিছুই পাননি জমির মালিকরা।

প্রসঙ্গত, জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের যে মামলাটির রায় আজ হয়েছে, সেটি দায়ের হয়েছিল ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়। মামলার অভিযোগ ছিল খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।