খালেদা জিয়ার সাজাকে ঐতিহাসিক রায় বলে সংসদে অভিহিত

বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজাকে ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করে এ রায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সরকারি দল ও তাদের শরিক এমপিরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ সব কথা বলেন। এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন অনেকে। তার জেল হওয়ায় অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরপর বক্তব্য রাখেন ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, জাসদের শিরীন আক্তার, নাজমুল হক প্রধান, বিএনএফের এসএম আবুল কালাম আজাদ। সংসদ সদস্যরা লন্ডনে হাই কমিশনের হামলার ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত করে এ ব্যাপারে বৃটিশ সরকারের কাছে শাস্তির সুপারিশ পাঠানোর দাবিও জানান। আইনের চোখে সবাই সমান, আজকের রায় সবার জন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সংসদ সদস্যরা বলেন, রায়ের মাধ্যমে জিয়া পরিবারের রাজনীতির ইতি টানা হয়েছে। তারা আর কোনদিন এদেশে সরকার গঠন করতে পারবে না।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার ৫ বছর জেল হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। এ মামলা যাতে পরিচালিত করা না যায় সেজন্য অনেক বাধা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের উপর হামলা করে প্রিজন ভ্যান ও পুলিশের রাইফেল ভাঙচুর হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেল হত্যা মামলার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের নিয়ে দল গঠন করেছে। বিএনপি এখন অপরাধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান, অন্যায় করলে যে কারো বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মামলার রায়কে বানচাল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা যুক্তরাজ্যে হাই কমিশনে হামলা করেছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আজ মামলার রায়ের জন্য নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার সময় বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করছে। ওই সময় পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, পাপ করতে করতে মানুষ যখন একটি পর্যায়ে যায় তখন আল্লাহ কোনো না কোনো ভাবে সাজা দেয়। তিনি একাধারে খুন করেছেন, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন, লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার দুই ছেলেসহ….। এর সব কিছুই আমরা জানি। যে রায় হয়েছে তা ঐতিহাসিক। দেশের মানুষ তা স্মরণ রাখবে। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করলেও যে রেহায় পান না এটাই প্রমাণ হয়েছে। দেশে যে আইনের শাসন আছে তা প্রমাণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জিয়া পরিবারের এখানেই ইতি টানা হল। জিয়া পরিবার আর কখনও দাঁড়াতে পারবে না। এরা আর কোনো দিন এ দেশে সরকার গঠন করতে পারবে না।

ফেনী-১ আসনের জাসদের সদস্য শিরীন আক্তার বলেন, রায়ের ফলে জাতি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেয়েছে। জাতি প্রত্যাশা করেছিল এমন একটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ও তার সঙ্গীদের সাজা হবে। আজ তাই হয়েছে। আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করছি। এ মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিহিংসার সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার পুরো জীবনটায় মিথ্যা আর দুর্নীতিতে ভরা। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির কথা শুনে আমি আমার নির্বাচনী এলাকার শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না।

নাজমুল হক প্রধান বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জামায়াতকে রক্ষায় গত পাঁচ বছর ধরে সন্ত্রাস করে যাচ্ছেন। গ্রামে একটা প্রবাদ আছে কুকুরের লেজ চোঙায় ভরলে সোজা হয়। ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী এ মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বলেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর থাকাকালে রাষ্ট্রের আমানত সৌদিতে পাঠিয়েছেন। তাই এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রায়। তিনি আরও বলেন, ওই কুখ্যাত খুনি দুর্নীতিবাজ তারেক জিয়ার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে গতকাল লন্ডনে বাংলাদেশে হাই কমিশনে হামলা চালিয়েছে। এ রায় সকল দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি বার্তা।

এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্নীতি কারণেই আদালত সাজা দিয়েছেন। জনগণ আবার আতঙ্কিত হয়েছিল যে উনি (খালেদা জিয়া) হয়তো আবারো অতীতের মতো লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেবেন। এটা না দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। দশ বছর পরে হলেও এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় আদালত খালেদা জিয়াকে জেল দিয়েছে, এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।