‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না’

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আর এর দায়িত্ব নিতে হবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্তমান সরকারের বিগত চার বছরের অর্জন মূল্যায়ণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, নতুবা আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এক ধরনের মন্তব্য করছেন, আবার মন্ত্রীরা ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এ কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন নিয়ে জনগণের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির মূল দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে উল্লেখ করে মান্না বলেন, আমরা মনে করি দেশে সংসদ বলবত রেখে কোনোভাবেই আরেকটা সংসদ নির্বাচন হতে পারে না। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য হবে না।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার দেশে জিডিপির হার বৃদ্ধির বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে। মূলত এর পেছনে সরকারের কোনো ভুমিকা নেই। দেশের বিভিন্ন পেশাজীবি ও প্রবাসীদের ঘামে জিডিপির হার বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে ‘দরিদ্রের হার’ কমছে সরকারের এমন দাবি সঠিক নয়। বর্তমানে দারিদ্র কমছে না, ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। প্রতি বছর দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে প্রায় পাঁচ হাজার। এ কারণে সমানতালে মাথাপিছু আয় বাড়ছে না। ২০১৬ সালে দারিদ্র হ্রাসের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২ দশমিকে নেমে গেছে। তার মধ্যে ৩৬ জেলায় দরিদ্রের হার বেশি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের শ্রমে-ঘামে দেশে উন্নয়ন হয়েছে। সেটাও দেশে থাকছে না। প্রতি বছর গড়ে ৬০ হাজার কোটির বেশি বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে ২০১৪ সালেই পাচার হয়েছে ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাংক লুট, ঋণ খেলাপি ইত্যাদি।

গত চার বছরে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে মান্না বলেন, এ সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের খুব বড় একটা অর্জন হয়নি, হয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের রেকর্ড। এই সরকারের চার বছরে প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকে বিএনপির সদস্য বা সরকারের সমালোচক ছিলেন।

তিনি বলেন, গত চার বছরে দেশে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির রেকর্ড হয়েছে, বিশেষ করে ধর্ষণ। প্রায় সব ধর্ষণের সঙ্গেই সরকারি দলের কোনো না কোনো ব্যক্তি জড়িত ছিল। ২০১৪ সালে এর সংখ্যা ছিল ৭০৭টি, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৮৫টি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোমিনুল ইসলাম, সদস্য ডা. জাহিদ প্রমুখ।