বিএসএফের ফাঁসি ও ক্ষতিপূরণ চায় ফেলানীর বাবা
জেলার ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক আলোচিত ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ৭ বছরপূর্তী পালন করা হয়েছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে দিনটি উপলক্ষে ফেলানীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী গ্রামে তার রুহের মাগফেরাতের জন্য মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে তার পরিবার। অনুষ্ঠানে স্থানীয় নাখারজান হাফিজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীসহ ফেলানীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম (৪৬) সাংবাদিকদের জানান, সরকারি বা অন্য কারও সহযোগিতা না পাওয়ায় ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ৭ বছরপূর্তী পালনে তিনি তার মুদির দোকানের সামান্য উর্পাজনের পয়সায় মেয়ে ফেলানীর রুহের মাগফেরাতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। নুর ইসলাম আরও জানান, মেয়ে ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ৭ বছরপূর্তী পালন তিনি একটু ভালোভাবে করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আর্থিক অনুদানের জন্য একটি আবেদন করেন। কিন্তু এই আবেদনের কোন সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই ছোট্ট পরিসরে নিজের সামান্য অর্থ দিয়েই ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ৭ বছরপূর্তী পালন করতে হলো তাকে।
বিভিন্ন দাবি তুলে ফেলানীর বাবা বলেন, ফেলানীর হত্যার বিচারের রায় পূনঃবিবেচনার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দুইটি রীট আবেদন করেছি। এই রীট শুনানী হবে ১৮ জানুয়ারি। আমি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার আশা করছি। এই শুনানীতে মহামান্য আদালত ফেলানী হত্যার অভিযুক্ত বিএসএফ অমিয় ঘোষকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করবেন এই দাবি ও আশা করছি। পাশাপাশি ভারত সরকারের কাছে ফেলানী হত্যার ক্ষতিপূরণ দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তার মেয়ে ফেলানীর স্মৃতি ধরে রাখতে ফেলানী মোড় থেকে তার বাড়ির সমানের প্রায় ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ ও রাস্তাটিকে ফেলানী সড়কের নামকরণ করার দাবি জানান।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, আমার মেয়ে ফেলানীকে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু এখনও আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না। তিনি তার মেয়ে ফেলানীর আত্মার শান্তির জন্য ভারতের সুপ্রীম কোর্টের কাছে ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফের ফাঁসি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুয়াশাছন্ন শীতের দিনে ভারতের আসাম রাজ্যের বনগাইগাঁও এলাকা থেকে পিতা নুর ইসলামসহ কিশোরী নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তের ৯৪৭/৩এস আন্তর্জাতিক পিলারের পাশে ভারতীয় খেতাবেরকুটি সীমান্তে চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে পাশবিক নির্যাতন করে। পরে তারা পাখি শিকারের মত গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে। এ সময় বিএসএফ হায়েনারা ফেলানীকে হত্যা করার পরও ক্ষান্ত হয়নি। তারা ফেলানীর মৃত দেহকে দীর্ঘ সময় কাটা তারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে।
বিশ্ব আলোচিত এই হত্যাকান্ডের বিচার ভারতের উচ্চ আদালতে গড়ালেও এখনও ন্যায় বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার। হত্যাকারী অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দু’দফায় বেকুসর খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ আদালত।
বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার না পেয়ে ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবি অপর্নাভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহায়তায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ভারতের উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রিট গ্রহণ করে আগামী ১৮ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছে।
মোঃ মনিরুজ্জামান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি