প্রকৃতি ভালবাসলে ঘুরে আসুন মন্দির-শহর ঢেঙ্কানল

প্রকৃতি যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা ঢেঙ্কানল। বাজেটে পোষালেই যাঁরা ঘুরতে যেতে এক পায়ে খাড়া, তাঁদের জন্যও। ওডিশা’র ঢেঙ্কানল মন্দির-শহরও বটে।

খুঁজলেই রোমাঞ্চকর জায়গার সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে। বিশেষ করে এখানকার মন্দিরগুলো যদি দেখে ফেলতে পারেন, প্রাচীন ভারতের স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাবে। শীতকাল হল ঢেঙ্কানল যাওয়ার সেরা সময়।

কনকেশ্বর মন্দির: ঢেঙ্কানল থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে। তালচের শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার। কনকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, পশ্চিমেশ্বর এবং কপিলেশ্বর পূজিত হন মন্দিরে। ওডিশায় যে সময় থেকে মন্দির তৈরি শুরু হয়েছে, তখনকার নিদর্শন পাবেন এখানে।

জোরান্দা: এই জায়গাটা অবশ্য একটু বেশিই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মহিমা গোঁসাইয়ের সমাধি এখানে বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া শূন্য মন্দির, গদি মন্দির এবং ধুনি মন্দির দেখার মতো। মাঘ মাসের পূর্ণিমায় মেলাও বসে এখানে।

কপিলাস মন্দির: ঢেঙ্কানল থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দির। ৬০ ফুট উঁচু। রাজা নরসিংহদেবের রাজত্বকালে, ১২৪৬ অব্দে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে রয়েছে পয়ামৃত কুণ্ড এবং মারিচী কুণ্ড।

ইতিহাস বলছে, এখানে কপিল মুনির আশ্রম ছিল প্রথমে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, জায়গাটা পরে দ্বিতীয় কৈলাস হিসেবে জনপ্রিয় হয়। যে কারণে কৈলাসের সঙ্গে ছন্দ করে কপিলাস নামটা হয়েছে। গণেশ, কার্তিক, গঙ্গা, জগন্নাথ নাকি এখানে তপস্যা করেছেন।

সপ্তসহ্য: ঢেঙ্কানল শহরের কাছেই সপ্তসহ্য গ্রাম। পার্বত্য এলাকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। মানসিক শান্তি খুঁজতে চাইলে এর চেয়ে ভাল জায়গা কমই আছে। পুরাণকথা অনুযায়ী, অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবরা এখানে কিছুদিন বাস করেছেন। সপ্তসহ্য জলপ্রপাত এবং টিকউড গার্ডেন দেখার মতো।

 নাগনাথেশ্বর মন্দির: ঢেঙ্কানল থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে নাগিনা গ্রামে রয়েছে এই মন্দির। শিবরাত্রিতে ভক্ত সমাগম হয় প্রত্যেক বছর। কেশারী বংশের রাজত্ব ছিল এখানে। মনে করা হয়, এটাই ওডিশার সবচেয়ে পুরনো শিবমন্দির।

সুপ্রাচীন দারুকাবন বা নিমবন রয়েছে এখানে। পণ্ডিত নাগেন্দ্রনাথ মহাপাত্র তাঁর ‘নাগনাথ শতকম’এ দাবি করেছেন, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি এখানেই রয়েছে। অঙ্গ এবং কলিঙ্গের সীমান্তে অবস্থিত এই জায়গায় পুরনো একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষও রয়েছে।

শ্রীরঘুনাথ মন্দির: ঢেঙ্কানলের বিখ্যাত বৈষ্ণব পীঠস্থান। স্থাপত্যের দিক দিয়েও খুবই উচ্চমানের।

অষ্টশম্ভু মন্দির: ঢেঙ্কানল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির। নদীর তীরে আটটি স্থানে রয়েছে আলাদা শিবমন্দির। যে কারণে এই মন্দিরকে অষ্টশম্ভু মন্দির বলা হয়।

দশম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল মন্দির। কলিঙ্গ স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন। মন্দিরে ৪.১৫ মিটারের একটি বিমানের আদল রয়েছে। অষ্টশম্ভু মন্দির ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকেও যাওয়া যায়। দূরত্ব দু’কিলোমিটার।

কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ঢেঙ্কানলের দূরত্ব সড়কপথে ৪৫৮ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ঢেঙ্কানলের ডিরেক্ট ফ্লাইট নেই। ভুবনেশ্বরে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। ট্রেনেও যেতে পারেন। নিজের গাড়ি থাকলে তো ধীরেসুস্থে যেতেই পারেন। সাড়ে আট ঘণ্টা মতো লাগবে।

কোথায় থাকবেন: ভুবনেশ্বরে থাকতে পারেন। সেখান থেকে ঢেঙ্কানল ঘুরে আসতে পারেন। আবার ঢেঙ্কানলেও হোটেল রয়েছে যথেষ্ট সংখ্যায়।